আজ পর্যন্ত কোনও একটি জাতীয় নির্বাচন ঠেকানো যায়নি।
সম্পাদকের কলম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০১, ২০২৩
পরিষ্কার হয়ে গেল বিএনপি এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিলো। অনেকেই ভেবেছিলেন, শেষ মূহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভুল করবে না।
দলটি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পরেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো। একাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় অনেকেই সাধুবাদ জানিয়ে বলেছিল, বিএনপি রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দেয়। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সংবিধানমতে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে অনড় অবস্থানে থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দলটি নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
দলটি বর্তমানে হরতাল-অবরোধ ডেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারি দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এ দাবি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আমলে নেয়নি। অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারি দাবি হালে পানি না পাওয়ায়, অনেকের জল্পনা-কল্পনা ছিলো দলটি, উপায় না দেখে সংবিধানমতেই নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু জল্পনা-কল্পনারও অবসান হলো, বিএনপি সত্যিই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বসল। কিছুদিন আগেও বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি বিশ্বাস দৃঢ়মূল ছিলো যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনী এ পদ্ধতি বিএনপি কায়েম করতে পারবে। ফলে দলটির নেতা-কর্মীাদের মন চাঙা ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করায়, বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা বলা শুরু করেছে যে, সংবিধানমতে নির্বাচনে অংশ নিলে কি এমন মন্দ হত? নির্বাচন বর্জন করা থেকে অংশ নিলেই ভালো হত।
বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বুঝতে পারছে, এই মূহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েম কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তাই তদের মন একেবারেই ভালো নেই।
বলা চলে যে, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৪টি দল ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনী তফসিলে আর কোনো পরিবর্তন হবে না। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল ৪টার মধ্যে যারা মনোনয়নপত্র জমা দেননি তারা আর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ২১ বছর ছিলো। কখনও তারা নির্বাচন বর্জন করেনি। নির্বাচনে জিততে পারবে না জেনেও বর্জন করেনি। কিন্তু বিএনপি ভিন্ন পথে হেঁটেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েম করতে পারবে না জেনেও নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বরং নির্বাচন ঠেকাতে হরতাল-অবরোধ দিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, শত শত যানবাহন পুড়িয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। অথচ দেশের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি থাকার পরেও দলটি কি একটি বাস পুড়িয়েছে যে, নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে? তা করেনি। কখনও জনস্বার্থ হাসিলে দলটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়নি। বরং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেমন দেশব্যাপী ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও একইরকম কর্মকান্ড শুরু করেছে। এতে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্বে চরম দৈন্যতা রয়েছে। এটাই কাল হয়েছে দলটির জন্য।
কেউ যদি মনে করেন, বিএনপি ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উল্টে দিতে পারবে, তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ আজ পর্যন্ত কোনও একটি জাতীয় নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। বিএনপির দুর্বল হরতাল-অবরোধ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে সক্ষম হবে না কখনওই। বরং যেভবে দলটি হরতাল-অবরোধ দিয়ে সহিংস আচরণ করছে, তার পরিণতিও ভোগ করতে হবে। তাই দলটির নেতৃত্বকে অনেক কিছু পুর্নবিবেচনায় নিতে হবে।