এক যুগে বদলে গেছে কক্সবাজারের চেহারা।
ডেস্ক নিউজ আদালত বার্তা :৮ মে ২০২৩।
কিছু সীমাবদ্ধতা ছাড়া এবার সত্যিকার অর্থেই কক্সবাজারকে পর্যটন শহর মনে হয়েছে। শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তজুড়ে দৃষ্টিনন্দন চার লেনের সড়ক, শত শত হোটেল-মোটেল, পর্যটকদের উপযোগী দোকানপাট, শুধু শহরেই তিনটি সাগর সৈকতের পয়েন্ট ইত্যাদি। সড়ক সংযোগে স্থাপিত হয়েছে নানা সমুদ্রসংশ্লিষ্ট শিল্পকর্ম।
পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য যুক্ত হয়েছে অ্যাকুরিয়াম, সৈকতে নানা ধরনের রাইড এবং দিনব্যপী সমুদ্র ভ্রমণের আয়োজন। এর মধ্যে সব থেকে আকর্ষণীয় হচ্ছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন।
ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী দূরপাল্লার বাসগুলোর শেষ গন্তব্য ছিল শহরের কলাতলী এলাকা। ওখান থেকে গাড়ি, অটোরিক্সা বা রিক্সায় করে সরু রাস্তা দিয়ে হোটেলে যেতে হতো। লাবণী পয়েন্ট ছিল শহরের একমাত্র সমুদ্র সৈকত। হাতেগোনা কয়েকটি হোটেল, গেস্ট হাউস নিয়ে ছিল পর্যটন শহর। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে অনেকটা। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্র সৈকত। লাবণী পয়েন্ট এখনো পুরনো, অরিপরিকল্পিত এবং নোংরা। সুগন্ধা এবং কলাতলী বেশ গোছানো, অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন। পরিকল্পিত ও প্রশস্ত প্রধান সড়ক বদলে দিয়েছে কক্সবাজার শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা। অসংখ্য বড় হোটেল-মোটেল দিয়েছে কক্সবাজারের আভিজাত্য। এখন কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী বলাই যায়। শুধু নজর দিতে হবে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে।
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে শুরু হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে তৈরি হয়েছে চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার মেরিন ড্রাইভ। একদিকে সাগর এবং অন্যদিকে স্থলভাগে নিরবচ্ছিন্ন পাহাড়ে ঘেরা অসাধারণ প্রকৃতি। সাগর এবং পাহাড়ের মাঝখানে কম-বেশি ২০০ মিটার প্রশস্ত সমতল করিডর। পথের প্রথম দিকে রয়েছে মাছের হ্যাচারি জোন। এর একটু পরই দরিয়ানগর ইকোপার্ক এবং সমুদ্র সৈকত। রাস্তার পূর্ব পাশে অরণ্যঘেরা পাহাড়, কখনো সমতল ভূমি। পশ্চিমে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। কলাতলী থেকে ১২ কিলোমিটার অগ্রসর হলে হিমছড়ি।
একদিকে সমুদ্র সৈকত অন্যদিকে পাহাড়ি ঝর্ণা, পাহাড়ে আরোহণ করা ও সুউচ্চ পাহাড় থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার সুযোগ। হিমছড়ি পার হলে কাঁকড়া বিচ ও পেঁচার দ্বীপ, করাছিপাড়া, মংলাপাড়া হয়ে রেজুখাল। খালের ওপর স্টিলের বেলি ব্রিজ। এই স্থানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। সরু ব্রিজটি দিয়ে একদিকে যানবাহন চলাচল করতে পারে। তখন অন্যদিকের যানবাহন বন্ধ করে রাখা হয়। সিঙ্গেল লাইনের ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ জরুরি।
আরও সামনে এগোলে সোনারপাড়া, চরপাড়া, নিদানিয়া হয়ে ইনানী বিচ। ইনানী থেক পূর্বদিকে পাহাড়ি পথ বেয়ে চলে যাওয়া যায় কয়েক কিলোমিটার ভেতরে। এলাকার মানুষ নাম দিয়েছে ‘মিনি বান্দরবান’। দেখতে অনেকটা বান্দরবানের প্রকৃতির মতোই। পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে পিচের রাস্তা।
পাশে গভীর খাদ। সবুজের সমারোহে সুন্দর প্রকৃতি পর্যটকদের মন ভালো করে দেয়। মিনি বান্দরবান ঘিরে গড়ে উঠেছে কিছু দোকানপাট। পর্যটকরা এই সব দোকান থেকে পাহাড়ি পণ্য কিনতে পারেন। চা পান করতে করতে অবলোকন করতে পারেন পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য। স্থানীয় গাড়ি ও অটোচালকরা পর্যটকদের এই এলাকা পরিদর্শনে উৎসাহিত করেন। যারা যান তারা পাহাড়ের সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হন না।
কলাতলী থেকে ইনানীর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এরপর টেকনাফ পর্যন্ত রয়েছে আরও ৫৫ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। দীর্ঘপথেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য সৈকত পয়েন্ট, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ। কোথাও একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে সমুদ্র, আবার কোথাও সাগরের উল্টা দিকে সমতল ভূমি। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মোট ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের চিত্র। হতে পারে বিশে^র সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন হাব। শুধু প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, যা প্রণয়ন করতে হবে এখনই। বর্তমান সরকার এই সম্ভাবনার অর্ধেক বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। বাকি রয়েছে অর্ধেক। সঠিক পরিকল্পনায় এই পর্যটন কেন্দ্রই হয়ে উঠতে পারে দেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।
ঈদের ছুটি কাটাতে সপরিবারে গিয়েছিলাম কক্সবাজার। উঠেছিলাম তারকাখচিত ‘সি পার্ল’ রিসোর্টে। রয়েল টিউলিপ নামে পরিচিত রিসোর্টটিতে পর্যটকের সকল বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু রিসোর্টের বাসিন্দা নয়, বাইরের পর্যটকরাও এর নানা আয়োজনে শরিক হতে পারেন। অভিজাত আবাসনের পাশাপাশি রিসোর্টে রয়েছে অন্তত পাঁচটি নানা ধরনের রেস্টুরেন্ট। কন্টিনেন্টাল, ভারতীয়, বাংলাদেশী খাবারের নানা আয়োজন রয়েছে এই সব রেস্টুরন্টে। রুচি অনুযায়ী বাসিন্দরা যে কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ করতে পারেন।
রয়েছে দুটি বড় সুইমিং পুল। নানা আয়তনের একাধিক সম্মেলন কক্ষ, যার একটিতে আমরা ঈদের নামাজ আদায় করেছি। নিজস্ব সমুদ্র সৈকত, ফুল ও ফলের বাগান, বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটার রাস্তা, টেনিস-ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ছবি তোলার বেশ কয়েকটি স্পট, দেশী-বিদেশী অসংখ্য গাছ, বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, মিনি সিনেমা হল, জিম, সুপরিসর কার পার্কিং ইত্যাদি আরও অনেক কিছু রিসোর্টটিকে বৈশিষ্ট্যময় করে তুলেছে।
রিসোর্টের কক্ষে বসেই দেখা যায় সীমাহীন সমুদ্রের উথাল-পাথাল ঢেউ। রাতে সাগরের গর্জন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যায়। সকাল এবং সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকতে পা ভিজিয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত। পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ওয়াটার পার্ক। বাইরের পর্যটকরাও নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট কেটে এতে প্রবেশ করতে পারেন। ওয়াটার পার্কে রয়েছে নানা ধরনের বিনোদনের আয়োজন, রাইড এবং পানির কৃত্রিম ‘ওয়েভ পুল’। পুলটি তৈরি করা হয়েছে সাগর সৈকতের আদলে। সৈকতে আছড়ে পড়ছে কৃত্রিম ঢেউ। একেকটি ঢেউ উঠে যাচ্ছে সাত ফুট পর্যন্ত উচ্চতায়। সরাসরি সাগর সৈকতে না গিয়েও এই জলাধারে অবগাহন করা যাবে কৃত্রিম ঢেউয়ে। অতি সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ঘোস্ট হাউস। কৃত্রিম ভূতের কর্মকা- বাচ্চাদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।
সি পার্ল গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক আজিম শাহ থাকেন ওখানেই। সারাদিন হেঁটে বেড়ান গোটা রিসোর্টে। কোথাও একটি ঝরাপাতা থাকলেও তার নজর এড়ায় না। শতভাগ প্রফেশনাল এই কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে রিসোর্টটি হয়ে উঠেছে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান। দেশের পর্যটক ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং প্রতিবেশী ভারতের বিপুল সংখ্যক পর্যটক দেশের সবচেয়ে বড় এই রিসোর্টে অবকাশ যাপন করতে এসেছেন। আজিম শাহ জানালেন, এই রিসোর্টে ৪৮০টি বিভিন্ন আকারের বিলাসবহুল আবাসিক কক্ষ রয়েছে যা বাংলাদেশে আর কোনো রিসোর্ট বা পাঁচ তারকা হোটেলে নেই। শুধু আরামদায়ক আবাসনই নয়, সমুদ্র সৈকতে স্থাপিত রিসোর্টটির সুস্বাদু খাবার, নিরাপত্তা এবং বিনোদনের সকল আয়োজন পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
কক্সবাজার শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হলেও রিসোর্ট থেকে প্রতি এক ঘণ্টা পর পর শাটল বাস সার্ভিস রয়েছে কক্সবাজার শহরের সঙ্গে। নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দিয়ে হোটেল থেকে শহরে যাতায়াত করা যায়। রিসোর্টের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরের যাত্রী আনা-নেওয়া করা হয় বিনা ভাড়ায়। আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট। রিসোর্টের গেটেই পাওয়া যায় খোলা জিপ, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা। আশপাশে ঘোরাঘুরি করার জন্য এরা খুবই সহায়ক। এ ছাড়া তিন/চারদিন সময় কাটানোর জন্য রিসোর্ট, সমুদ্র সৈকত এবং মেরিন ড্রাইভই যথেষ্ট। এ জন্য আর শহরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এসব সুযোগ-সুবিধার কারণে রিসোর্টটিতে কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী পর্যটক থাকে বছরজুড়ে।
সি পার্ল সামর্থ্যবান পর্যটকদের জন্য চমৎকার আয়োজন। স্বল্প বাজেটের পর্যটকদের জন্যও রয়েছে অনেক থাকার ব্যবস্থা। কক্সবাজার শহর ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল-মোটেল। নগরীতে এখন আর তেমন জায়গা খালি নেই। উদ্যোক্তারা তাই বেছে নিয়েছেন মেরিন ড্রাইভের পাশে বিস্তর খালি জায়গা। ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভজুড়ে সি পার্লের মতো আরও অনেক হোটেল-রিসোর্টের কাজ চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়ত গোটা মেরিন ড্রাইভ হয়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র। বিষয়টির প্রতি সরকারের এখনই নজর দিতে হবে। বিশেষ করে মেরিন ড্রাইভ নিয়ে পর্যটন করপোরেশনকে এখনই একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু দেশী পর্যটক দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপিত হবে না।
বিদেশী পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে গোটা এলাকাটি একটি পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করতে হলে নিতে হবে বিশেষ উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, সাগরপাড়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার ইউরোপ থেকে কেউ কক্সবাজারে আসবে না। বিশে^র বিভিন্ন পর্যটন সমৃদ্ধ দেশের মতো বিদেশীদের জন্য গড়ে তুলতে হবে ‘এক্সক্লুসিভ জোন’। সংরক্ষিত জোনে দেশী পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারবেন না। এই সব এলাকায় বিদেশীদের চাহিদা অনুযায়ী বার, নাইট ক্লাব, স্পা, ক্যাসিনোসহ সকল বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে শতভাগ নিরাপত্তা। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সঙ্গে এই সব আয়োজন থাকলেই কক্সবাজার হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের পর্যটন হাব।
মেরিন ড্রাইভে সমুদ্রের গর্জন, নীল ঢেউয়ের মধ্যে সূর্যের আলোর খেলা এবং অবারিত সবুজের সমারোহে পাথরহৃদয় মানুষেরও মন ছুঁয়ে যায়। সাগরের নির্মল বাতাসে উজ্জীবিত হওয়া যায় সৈকতঘেঁষা মেরিন ড্রাইভে দাঁড়িয়ে। যান্ত্রিক নাগরিক জীবন থেকে থাকা যায় কিছুটা দূরে। সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভালো হয়ে যায় বিষণœ মন। কে না চাইবে এমন একটি পরিবেশ উপভোগ করতে। মেরিন ড্রাইভ ঘিরে পর্যটন হাবের অপার সম্ভাবনা এ জন্যই।
মেরিন ড্রাইভের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৩ সালে প্রথম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে। অল্প কিছু কাজ এগোনোর পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প হিসেবে এটি একনেক বৈঠকে পাস হয় এবং তিন ধাপে ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তন হলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের আমলে আবার কাজ শুরু হয়। প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হয় কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তা। ইনানী থেকে শিলখালি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয় ২০১৬ সাল নাগাদ। শিলখালি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত অবশিষ্ট ৩২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে। তিন দফায় মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
শুধু পর্যটন শিল্পের বিকাশ নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা। আগে যারা শুধু মাছ ধরার পেশায় ছিলেন, এখন তারা যুক্ত হয়েছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে। পর্যটকদের আগমনে মুখরিত মেরিন ড্রাইভের পুরোটাই এখন স্থানীয় সাধারণ মানুষের আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের মানুষ রক্ষা পেয়েছে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে। জমিতে হ্রাস পেয়েছে লবণাক্ততার প্রভাব। উৎপাদিত হচ্ছে নানা ধরনের কৃষি পণ্য। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবহন সুবিধার কারণে মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, বঙ্গোপসাগরের মৎস্য আহরণ এবং হ্যাচারিসহ মৎস্য শিল্পের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে এই মেরিন ড্রাইভ।
বিশ্ব ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের অবদান মাত্র ৩ শতাংশ। কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ লাখ মানুষের। থাইল্যান্ডে এই পরিমাণ ২১, মালয়েশিয়ায় ১৪, চীনে ১১ এবং ভারতে ৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশের পর্যটন খাতের আয়ের প্রধান উৎস দেশী পর্যটক। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব কম। এর সঙ্গে সমপরিমাণ বিদেশী পর্যটক যুক্ত করতে পারলে জাতীয় আয়ের বড় অংশজুড়ে থাকবে পর্যটন খাত। পর্যটকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কঠিন কিছু হবে না।
এই প্রক্রিয়ায় মেরিন ড্রাইভ অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক সংযুক্ত হবে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে। সড়কটির নির্মাণ কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে এ সড়কের সংযোগ হলে পর্যটনের পাশাপাশি শিল্প-কারাখানায় সমৃদ্ধ হবে গোটা আড়াইশ’ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। অপার সম্ভাবনার প্রকল্পটি যত্নের সঙ্গে বাস্তবায়ন হোক এই আমাদের প্রত্যাশা।