কেমন হবে রাশিয়ার পরমানু হামলা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ,রাশিয়ার পরমানু অস্ত্রের ব্যবহার। ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্র ভান্ডার খালি হলেও ক্রমাগত ইউরোপীয় আধুনিক অস্ত্রের চালান এই যুদ্ধে ফুয়েল পাম্পিং এর মতো কাজ করছে।
অপর দিকে রাশিয়ান বিমান বাহিনীও নিখুঁত বিমান হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারেনি। ফলে ক্রমাগত বিমান হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনিও বাহিনীকে পরাস্ত করা যাচ্ছেনা। এর ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কারণ সম্মুখ যুদ্ধে কোনো অঞ্চল দখল করতে হলে কয়েকগুণ সৈন্যের দরকার পরে। যার জোগান রাশিয়ার নেই।
যাইহোক যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে ইউক্রেন পুনরায় আক্রমণাত্মক ভূমিকায় রয়েছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যেখানে conventional যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। কারণ আমেরিকার নেতৃত্বে ইউরোপ থেকে খুবই উন্নত মানের অস্ত্রের চালান ইউক্রেনে সরবরাহ হচ্ছে।
এখন যুদ্ধটা একটা আত্মসম্মানের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। নেটো বাহিনীর পরাজয় নাকি রাশিয়ার পরাজয়। নেটো বাহিনীর পরাজয় হয়তো ইউক্রেন বিভক্ত হবে। রাশিয়ার পরাজয় হয়তো আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ বয়ে আনতে পারে। তবে রাশিয়া কী নিজের অস্তিত্ব রক্ষার অজুহাতে পরমানু অস্ত্রের ব্যবহার করবে? করলেও কেমন মাত্রায় করবে তাই জানার চেষ্টা করবো আজকে।
রাশিয়ার nuclear strategy হচ্ছে escalate to de-escalate. মার্কিন গবেষণা মতে বড় ধরনের পরমানু সংঘাত বা যুদ্ধ এড়ানোর জন্য ছোট আকৃতির পরমানু অস্ত্র ব্যবহার করে শত্রু পক্ষকে চমকে দিয়ে আলোচনার টেবিলে আনার কৌশল এটি।
অর্থাত রাশিয়া কনভেনশনাল যুদ্ধে অস্তিত্ব সংকটে পরলে পরমানু অস্ত্র সমৃদ্ধ বা পরমানু অস্ত্র বিহীন কোনো রাষ্ট্রের উপর Tactical nuclear warhead ব্যবহার করবে। Tactical Nuclear Warhead (TNW) বলতে বুঝায় ছোট আকৃতির পরমানু বোমা। যা শত্রু পক্ষের সামরিক অবস্থানের উপর ব্যবহার করা হয়। অর্থাত সাধারণ মানুষের অবস্থান থেকে দূরে অবস্থিত সামরিক ঘাটি বা কৌশলগত কোনো স্থাপনার উপরে হামলা করার মতো ছোট আকৃতির বোমা।
এই বোমার সক্ষমতা নির্দিষ্ট না করা থাকলেও সাধারণত 50KN এর কম ক্ষমতাসম্পন্ন এই warhead। আর Strategic Warhead বলতে সাধারণত 100kn এর চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন Warhead বুঝায়।
আর রাশিয়ার হাতে Tactical Warhead আছে 2000 এর মতো এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে 1000 এর মতো। আর বড় আকৃতির Strategic warhead রাশিয়ার কাছে আছে 5977 টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে 5000+ আনুমানিক।
যাইহোক রাশিয়া এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হয়তো ছোট আকৃতির Tactical Warhead ব্যবহার করতেও পারে। যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে। এজন্য হয়তো সারা বিশ্ব থেকে মারাত্মক চাপে পরবে রাশিয়া। এখনও হয়তো কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। কিন্ত পশ্চিমা বিশ্বের পাল্টা পরমানু হামলা হয়তো হবেনা।
যদি রাশিয়ার উপর পাল্টা হামলা হয় তখন কেমন পরিস্থিতি হবে , সেই Doctrine ও রাশিয়ার রয়েছে। এবং এটা থাকা স্বাভাবিক। যেমন ভারতে nuclear doctrine হচ্ছে No First Use(NFU) । অর্থাত ভারত প্রথমে পরমানু অস্ত্র ধারা আক্রান্ত না হলে পরমানু অস্ত্রের ব্যবহার করবেনা।
আর রাশিয়ার সর্বশেষ Doctrine এমন।
a) arrival of reliable data on a launch of ballistic missiles attacking the territory of the Russian Federation and/or its allies;
b) use of nuclear weapons or other types of weapons of mass destruction by an adversary against the Russian Federation and/or its allies;
c) attack by [an] adversary against critical governmental or military sites of the Russian Federation, disruption of which would undermine nuclear forces response actions;
d) aggression against the Russian Federation with the use of conventional weapons when the very existence of the state is in jeopardy
অর্থাত রাশিয়াকে বা তার বন্ধু রাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে কেউ ICBM নিক্ষেপ করেছে এমন নির্ভরযোগ্য কোনো সংকেত পেলে। বা রাশিয়া বা রাশিয়ার বন্ধু পরমানু বা Weapons of mass destruction হামলার শিকার হলে। বা রাশিয়ার পরমানু হামলায় নিয়োজিত বাহিনীর উপর Tactical অথবা conventional হামলা হলে। অথবা রাশিয়ার উপর কেউ বড় ধরনের আগ্রাসন চালালে। তখন রাশিয়া পাল্টা হামলা করবে।
এখানে weapons of mass destruction বলতে তিন ধরনের বোমা বুঝায়। সেটা হতে পারে পরমানু অথবা রাসায়নিক অথবা জীবাণু অস্ত্র।
এখন রাশিয়ার Tactical Warhead ব্যবহারের সংকেত কিন্ত চলমান। যেমন বেলারুশে রাশিয়ান মিগ-31 যুদ্ধবিমান হাইপারসনিক মিসাইল নিয়ে উড়ছে। পাশাপাশি ক্রিমিয়ায় পরমানু অস্ত্রবাহী বোমারু বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। এরপর হয়তো রাশিয়া গুদাম থেকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে Tactical Warhead বের করবে। এবং সেটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই পশ্চিমা গোয়েন্দাদের নজরে চলে আসবে। যাতে রাশিয়া একটা হুমকি দিয়ে ইউক্রেনকে টেবিলে আনতে পারে।
এতকিছুর পরেও যদি পশ্চিমা শক্তি ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে তাহলে হয়তো পুতিন রাশিয়ার ভূখন্ডে আগ্রাসনের অজুহাতে Tactical Warhead ব্যবহার করতেও পারে।
কারণ পুতিন একটা কথা স্পষ্ট করেই বলে
“Fifty years ago, I learnt one rule in the streets of Leningrad: if the fight is inevitable, be the first to strike.”
ধন্যবাদ।