জননেত্রী শেখ হাসিনার ২১ শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার বক্তব্যের অংশ বিশেষ
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা ঃ ২১ আগষ্ট ২০২৩।
“মাইকটা তখন আমার হাতে, আমি নিচে নামছিলাম থমকে দাঁড়ালাম, মানে দাঁড়াতেও পারিনি এর মধ্যেই গ্রেনেডের আওয়াজ। হানিফ ভাই পাশেই দাঁড়ানো ছিল, হানিফ ভাই কেন জানি বারবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল,আমি বললাম আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না,আপনি এক পাশে সরে দাঁড়ান,না আমি এখানেই দাঁড়াব, এরপরে হামলার তীব্রতা বাড়ল ,উনি সাথে সাথে আমাকে ধরে ফেললেন। সাথে মামুন ছিল স্কোয়াড্রন লিডার রিটায়ার্ড ,নজীব ছুটে আসল,আসেপাশে আমাদের যারা ছিল সবাই ছুটে আসল,সবাই একেবারে আমাকে পুরা ঘিরে ধরল।একটার পর একটা গ্রেনেডের আওয়াজ হচ্ছে, আমাকে বসিয়ে ঘিরে আছে সবাই, আমি বারবার ওঠার চেষ্টা করছি,কিন্তু ওরা আমাকে ছাড়েনি,আমার চশমাটা কোথায় ছিটকে পড়ে গেল।আমি দেখলাম আমার গায়ে শুধু রক্ত পড়ছে, অর্থাৎ ওই যে স্প্লিন্টার গুলি সব এসে হানিফ ভাইয়ের মাথায়, গায়ে আর মাথায় পড়ছে,যেহেতু সে ধরে রাখছে তার রক্তগুলি আমার শরীর ভেসে পড়ে যাচ্ছে ।
তিনটা ফোটার পরপরই কয়েকটা সেকেন্ড, এরপরে আবার, মনে হচ্ছে যেন শেষ নাই একেবারে কেয়ামতের মত,কিছুই দেখা যাচ্ছে না চারদিকে ধোঁয়া ভয়াবহ অবস্থা। ঠিক জানি না আল্লাহ কিভাবে এদের হাতের থেকে বাঁচাল,আমার গায়ে একটাও স্প্লিন্টার লাগেনি কিন্তু আওয়াজে যে ক্ষতিটা হয়েছিল আমার ডানদিকের কানটাতে শুনতে পাইনি।
সেই ট্রাকের উপর অনেকেই আহত হয়েছে, ট্রাকের সিঁড়িতে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা আহত। আর সেদিনই ঐ ট্রাকে প্রথম একটা টেবিল দেওয়া হয়েছিল,সাধারণত টেবিল থাকে না কিন্তু ঐদিন টেবিল ছিল। যাহোক একটা পর্যায়ে যখন থামল,আমি উঠে দাঁড়ালাম, ওরা ভাবছে আমি মনে হয় আহত, কারণ আমার সারা শরীর তো রক্তাক্ত, ভাবছে আহত ,আমি বললাম না আমার তো কিছুই হয়নি। দেখলাম হানিফ ভাইয়ের পুরো মাথাটাথা ওইভাবে রক্তাক্ত অবস্থা এবং ওইখানে যারা ছিল সবাই, ওনার ছেলে খোকন সহ আমাদের যারা আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগের সবাই যারা সিঁড়িতে দাঁড়ানো ছিল সবাই আহত, এমনকি আমার সাথে জেনারেল তারেক সেও, আহত সবাই।
ওভাবে আমি যখন গাড়িতে উঠতে যাব,দরজাটা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো তখনই গুলি আসল এবং সেই গুলিতেই কিন্তু মাহবুব মারা গেল এবং আরও দুই একটা গুলি আমার গাড়িতে এসে লাগলো। গাড়িতে উঠে গাড়ি ছেড়ে দিল,যখন আমি গাড়িটা ঘুরিয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে,তখন আমি শুনছি হইচই আওয়াজ, গাড়িতো একটানে চালিয়ে নিয়ে চলে আসল ।পরে এসে জানলাম ওই আহত অবস্থায় মানুষ যখন পড়ে ছটফট করছ, তখন কিন্তু কোন পুলিশ কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্যের জন্য, উল্টো পুলিশ এসে লাঠি চার্জ করল,সেখানে লাঠি চার্জ এবং টিয়ারগ্যাস মারতে শুরু করল।যেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত পুলিশ এগিয়ে আসে সাহায্য করতে যারা আহত তাদেরকে রক্ষা করতে, এখানে দেখা গেল উল্টো। বরং আমাদের নেতাকর্মী যারা দূরে ছিল তারা ছুটে আসছে, তাদেরকে আসতে দেয়া হচ্ছে না বরং টিয়ারগ্যাস মারা হচ্ছে, ওই গ্যাসেও তো আরও অনেকে আহত হল।তার মানেটা কি?যারা আক্রমণকারী এদেরকে রক্ষা করার জন্যই এই টিয়ারগ্যাস মারা, লাঠিচার্জ করা।সরকারের যদি সহযোগিতা না থাকে তবে এধরণের ঘটনা ঘটতে পারে না।
আমার গাড়িটা যখন পাঁচ নম্বরে সুধা সদনে ঢুকল,ঢোকার সাথে সাথে, গাড়িটা ব্রেক করার সাথে সাথে পুরো গাড়িটা বসে গেল।গাড়িটা যে অতদূর টেনে নিয়ে আসল,আমার ড্রাইভারটা সাহসী ছিল মতিন নিয়ে আসছে, কিন্তু ওখানে ঢোকার সাথে সাথে গাড়িটা বসে গেল। আমি যখন নামছি, রেহানা ছিল ওতো চিৎকার, আমি বললাম না আমার কিছু হয়নি,হানিফ ভাই আমাকে ধরে ছিল তার সমস্ত শরীরে স্প্লিন্টার,সেই রক্তই আমার গায়ে।আমি তখন ওখানে দাঁড়িয়েই কোথায় আমাদের কারা, আমি সাথে সাথে আমাদের ড্রাইভার আলী হোসেন আর শাজাহান কে পাঠালাম। যে যতদুর পারা যায় ওখানে আমাদের যাদেরকে পাও তাদেরকে হসপিটালে নিয়ে যাও,সাথে চিকিৎসা কর।
সবথেকে দূর্ভাগ্যের বিষয় যারা বিএনপিমনা ডাক্তার, তারা কেউ মেডিকেল কলেজে ছিল না আর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন আহতকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।বলেছে এখানে ইমার্জেন্সিতে কেউ চিকিৎসা নিতে পারবে না, সেটা সম্পুর্নরুপে বন্ধ ছিল।আর বিএনপি পন্থী কোন চিকিৎসকই সেদিন কোন আহতকে চিকিৎসা দেয়নি।”