নির্বাচনী পরিস্থিতি দুই সপ্তাহে বদলে যাবে?
সম্পাদকের কলম
আদালত বার্তা : অক্টোবর ১৬, ২০২৩
মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল দেশে ফিরে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। পর্যবেক্ষক দল যে প্রস্তাব রেখেছে তার প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই বা কেমন, সেটাও দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে আলোচনায় বসবে কিনা তা বলা মুশকিল। বিএনপি এখনও অনির্বাচিত সরকারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে। অক্টোবর মাসে দলটি সরকার উপড়ে ফেলবে বলে বার বার বলছে। এমতাবস্থায় দুই দল আলোচনার টেবিলে বসবে কিনা সন্দেহ আছে। তবে আলোচনায় এসেছে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের পাঁচ পরামর্শ।
উল্লেখ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অর্থবহ সংলাপসহ পাঁচ পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। চলতি মাসের ৮-১২ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) একটি যৌথ প্রতিনিধিদল। দেশে ফিরেই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পাঁচটি মতামত তুলে ধরেছে।
প্রথমেই নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপের আহ্বান করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার আহ্বাননও জানানো প্রতিনিধিদল তাদের দ্বিতীয় প্রস্তাবে নির্বাচনের সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সব নাগরিকের ভিন্ন মতকেও সম্মান জানাতে বলা হয়েছে। মার্কিন নির্বাচনী মিশন তাদের তৃতীয় প্রস্তাবনা অহিংসার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনাতে আহ্বান জানিয়েছে। সবশেষে, দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অর্থবহ ও সমান রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে, যেন তা স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়া দেশের নাগরিক যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
আলোচনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ও আইনমন্ত্র। রবিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি শর্ত প্রত্যাহার করলে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূল নির্বাচন বিষয়ে আমরা সংলাপের বিষয়ে আমরা চিন্তা করবো। পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আমাদের অনেক আলোচনা হয়েছে। বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্বাচন কমিশন বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। বিএনপি সবার আগে চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এসব শর্ত রেখে সংলাপ হতে পারে না। ইলেকশন আমাদের নিজস্ব বিষয়। ওরা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে সুপারিশ করতেই পারে।
অন্যদিকে রবিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন নির্বাচন নিয়ে সংবিধান বা প্রচলিত আইনে যা আছে, তার বাইরে কোনো সংলাপ হতে পারে না। সংবিধান ও আইন মেনে যদি কেউ নির্বাচনে আসে, তাহলে আলোচনারও প্রয়োজন থাকে না। পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলিষ্টভাবে রবিবার (১৫ অক্টোবর ) এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলো বিএনপিকে সহযোগিতা করছে। একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমরা একা নই। পশ্চিমা বিশ্বের যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী…. তারা আমাদের সাহায্য করছে।
তবে তার এ বক্তব্যে কি ধরনের সহযোগিতা করছে কথায় পরিষ্কার নয়।
মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের পরামর্শ বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তবে পর্যবেক্ষক দল কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ তোলেনি। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইলে তো সব দলের এক চিন্তায় আসতে হবে। কোনও দল অনির্বাচিত সরকার চাইছে, বিদ্যামান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে মোটেই ইচ্ছুক নন। আবার কোনও দল সংবিধানের আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড়।
এ অবস্থায় কি হবে? নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। হাতে দুই সপ্তাহর মত সময় বাকি আছে। বিএনপি দুই সপ্তাহে কি করবে? তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে দেশের পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেবে। দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করবে। আর নির্বাচন উৎসবের আমেজ। এই আমেজে আমজনতা মজে যাবে।