বিএনপির গণমিছিল: রাজধানীজুড়ে সতর্ক পাহারায় থাকবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
ডেস্ক নিউজ আদালত বার্তাঃ২৯ ডিসেম্বর ২০২২।
বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি নিয়েও সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ১০ ডিসেম্বরের মতো শুক্রবারও রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউন করবে দলটি। পাড়া-মহল্লার প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থান থাকবে। বায়তুল মোকাররমসহ মসজিদগুলোর আশপাশেও সতর্ক পাহারা থাকবে। পাশাপাশি রাজধানীর নয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজধানীকে নিজেদের দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ‘বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ব্যর্থ হয়ে গণমিছিলের নামে আবারও সরকার পতনের নতুন ছক কষছে। এই অবস্থায় বিএনপির কর্মসূচিকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
বিএনপির কর্মসূচি মোকাবিলায় এবং ৩০ ডিসেম্বর রাজপথে থাকতে ইতোমধ্যে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে বর্ধিত সভা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সভায় তিনি নেতাদের নগরের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে ৩০ ডিসেম্বর মাঠে সতর্ক পাহারায় থাকার দিকনির্দেশনা দেন।
এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে নিজেদের উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে নয়টি জায়গায় শুক্রবার বড় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরে উত্তরার আমির কমপ্লেক্সের সামনে, মহাখালী ব্রিজের নিচে, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে, গাবতলী, শ্যামলী স্কয়ারের সামনে, মিরপুর-১ নম্বর ও মিরপুর-১০ নম্বর এবং ভাটারা ইউলুপের সামনে এসব সমাবেশ হবে। ঢাকা দক্ষিণের সমাবেশ দুটি হবে বঙ্গবন্ধু্ অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং যাত্রাবাড়ীতে। এই স্থানগুলোতে সকাল থেকেই দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের মতো সতর্ক পাহারায় থাকবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই স্থানগুলোতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও থাকবেন। এর মধ্যে শ্যামলী স্কয়ারের সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন। যাত্রাবাড়ীতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।ঢা
কা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘তারা (বিএনপি) যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকব।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই সতর্ক পাহারায় থাকবে। একই সঙ্গে দুটি জায়গায় আমাদের সমাবেশ হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, দলের পাশাপাশি সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও রাজধানীতে কড়া পাহারায় থাকবে। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় থাকবে। প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সকাল থেকে বড় জমায়েত করবে। এ ছাড়া মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের আলাদা আলাদা কর্মসূচি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১০ তারিখের মতোই আমরা ঢাকাসহ সারা দেশে সতর্ক পাহারায় থাকব।’
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় না। আমাদের সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। তারা গণমিছিলের নামে সহিংসতা করবে, আগুন নিয়ে আসবে, ভাঙচুর করবে, অগ্নিসংযোগ করবে, আমরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুপ করে থাকব? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। ঢাকা শহরে আগে কখনো ইউনিট কমিটি ছিল না। এবার দুই সিটিতে ১ হাজার ৬০০টির মতো ইউনিট কমিটি হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। যেসব বিভাগে সম্মেলন বাকি আছে সেগুলো হয়ে যাবে।। দু-এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নামও ঘোষণা করা হবে।’
একই দিন সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছি না। তবে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্পটে সতর্ক পাহারায় থাকবে। সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব জনগণের পাশে থাকা, যাতে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা কেউ বিনষ্ট করতে না পারে।’
বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মসূচির নামে অশান্তি, অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি যাতে করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে না, তারা দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’
একই সভায় আওয়ামী লীগকে সরকারের পাহারাদার উল্লেখ করে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, ‘তারা ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে সরকারের পতন ঘটাতে। তারা যদি সরকারের পতন ঘটানোর কোনো কর্মসূচি নিয়ে থাকে তাহলে আমাদের দায়িত্ব কী? আমরাই পাহারাদার হিসেবে সরকারকে পাহারা দেব।’