মুড়ির টিন বাসের ইতিহাস।
এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক, আদালত বার্তাঃ১৯ জুন ২০২৪।
আমাদের দেশে সড়কপথে প্রথমদিকের গণপরিবহণ ছিল এই মুড়ির টিন বাস। বাসের নাম মুড়ির টিন হওয়ার পিছনে রয়েছে এক অদ্ভুত কারণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমাদের অঞ্চলের মিত্রবাহিনীদের ব্যবহার করা যানবাহন এদেশের বিত্তশালীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এসব যানবাহনের মধ্যে ছিল ট্রাক,জিপ গাড়ি,ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও ভাঙ্গাচোরা কিছু গাড়িও বিক্রি করা হয়।
এগুলো গাড়ির ছিল কাঠের বডি। বিত্তশালীরা এসব কাঠের বডির গাড়িকে নাকবোঁচা বাসের আদলে মেরামত করতো। ইঞ্জিন আমদানি করা হতো যুক্তরাজ্য থেকে। অনেক সময় কাঠের বডি স্থানীয় মিস্ত্রীরাও তৈরি করতো। কাঠের বডির ওপরে মুড়ে দেয়া হতো টিন। নৌকার ছাউনির মতো করে বাসের ওপরে টিনের ছাউনি দেয়া হতো,যেন বৃষ্টি এলে যাত্রীরা ভিজে না যায়। বাসের ভেতরে চারধারে বেঞ্চের মতো করে সিট বসানো হতো। ২০-২২ জন বসার সুযোগ পেত। ৫০ জনের বেশি যাত্রী দাঁড়িয়েই থাকত। জানালার পুরোটাই খোলা যেত বলে বাতাস চলাচলের সুযোগ ছিল বেশি। মূলত এ থেকেই বাসগুলোর নাম হয়ে যায় মুড়ির টিন বাস।
আবার অনেকে বলে বাসে মুড়ির মতো ঠেসে যাত্রী ঢোকানো হতো বলে এই বাসের নাম হয়ে যায় মুড়ির টিন। এই মুড়ির টিন বাসগুলোকে স্টার্ট বাসও বলা হতো। একটি লোহার দন্ডের এক মাথা ইঞ্জিনে প্রবেশ করিয়ে জোরে ঘুড়িয়ে স্টার্ট দেয়া হতো বলেই এই নাম। পরে অবশ্য চাবি দিয়ে বাস চালুর ব্যবস্থা করা হয়। বাসে ছিল না কোনো ইলেকট্রনিক বা হাইড্রোলিক হর্ন। ড্রাইভারের ডান পাশে দরজার সাথে ভেপু বা হর্ন ছিল। ড্রাইভার হাত দিয়ে চেপে এই হর্ন বাজাতো। আবার অনেক বাসে পিতলের হর্ণ ব্যবহার করা হতো।
বাসগুলো মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হতো।
৬০,৭০ ও ৮০ দশকে বেশি চলতো মুড়ির টিন বাস। ২৫ বছরের পুরনো গাড়ির ফিটনেস বাতিল করা হলে সেই থেকে মুড়ির টিন বাস প্রায় উঠে যায়। তবে মুড়ির টিনের পরেও কাঠের তৈরি বডির বাস ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত থাকে।
কালের বিবর্তনে এই ঐতিহ্যবাহী মুড়ির টিন বাস হারিয়ে গিয়েছে। এখন লোকাল পরিবহণেও এসি বাসের দেখা পাই আমরা। প্রযুক্তির অতিশায্যে পুরাতনকে হটিয়ে নতুনরা স্থান করে নিবে,এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের আগের প্রজন্মের যারা মুড়ির টিন বাসে চড়েছেন,তারা স্মৃতিকাতর হবেন নিশ্চয়ই।।