দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অবশেষে দায়মুক্ত হলো দিল্লির নিজামুদ্দিনের তাবলিগ জামাত।
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তাঃ১৯ জুলাই ২০২৫
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অবশেষে দায়মুক্ত হলো দিল্লির নিজামুদ্দিনের তাবলিগ জামাত। দিল্লি হাইকোর্ট আজ এক যুগান্তকারী রায়ে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য তাবলিগ জামাতকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে দিল্লি পুলিশের দায়ের করা সমস্ত মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। এই রায় তাবলিগ জামাতের অংশগ্রহণকারীদের জন্য এক বিশাল স্বস্তি নিয়ে এসেছে, যারা শুরু থেকেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন।
বিচারপতি নীনা বনসল কৃষ্ণা দিল্লি পুলিশের দায়ের করা ৭০ জন ভারতীয়র বিরুদ্ধে ১৬টি প্রাথমিক তথ্যবিবরণী (এফআইআর) এবং ১৯৫ জন বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্র সহ সমস্ত মামলা খারিজ করে দেন। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছেন, দিল্লি পুলিশ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। বিচারপতি বনসল কৃষ্ণা তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, এটি ছিল একটি অসহনীয় পরিস্থিতি এবং অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই অসহায় হয়ে গৃহবন্দী থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। মারকাজে বসবাসকারী মানুষেরা নিষেধাজ্ঞার অমান্য করেননি এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ধোপে টেকে না।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ দেশজুড়ে আকস্মিক লকডাউন ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি পার্লামেন্টে অভিযোগ করেন যে, দিল্লিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে তাবলিগ জামাত। কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। কিন্তু আদালতের এই রায়ে সেই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলো।
২০২০ সালের ৯ ও ১০ মার্চ নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৯ হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছিলেন। ১৩ মার্চ ভিড় ঠেকাতে দিল্লি পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং ২৫ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সে সময় তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারী অনেকে তখনও দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন।
লকডাউনের পর থেকেই ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একাংশ করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য তাবলিগ সমাবেশকে দায়ী করতে থাকে। দিল্লি পুলিশও জামাতে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করে। এই ঘটনার পর সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু হয় এবং কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল থেকে মুসলমানদের সামাজিকভাবে বয়কট করার দাবিও ওঠে।
দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা ১৮৯৭ সালের মহামারি আইন এবং ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করেছিল। এছাড়াও ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনের আওতায় ৯৫৫ জন বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছিল ভিসা শর্ত না মানার অভিযোগে।
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি নীনা বনসল কৃষ্ণা মামলা খারিজ করার সময় দিল্লি পুলিশের কাছে পাল্টা জানতে চান, হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করা হলে বিদেশি নাগরিকসহ আটকে পড়া জনতা আশ্রয়স্থল ছেড়ে কোথায় যেতে পারতেন এবং কীভাবে যেতেন। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তরা অতিমারি আইন অথবা বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করেননি এবং অপরাধ করেছেন এমন কিছু প্রমাণও করা যায়নি। এই রায় ভারতের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।