নারীশিক্ষা ও নারীস্বাধীনতায় রোকেয়া।
বিশেষ প্রতিবেদন,আদালত বার্তাঃ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আমির হোসেন চৌধুরীর স্মারক বক্তৃতায় বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের রোকেয়ার চর্চা স্মারক বক্তৃতায় আহমেদ রফিক বলেছেন --১৮৮০ সালে যে মেয়ের জন্ম তাও আবার রংপুর পায়রাবন্দের রক্ষণশীল মুসলমান জমিদার পরিবারে তার পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ সহজ হবার কথা নয়। বাস্তবে তা হয় নি। কিন্তু বড়ভাই ইব্রাহিম সাবের এবং বড়বোন করিমুন্নেছা'র আগ্রহে ও চেষ্টায় রোকেয়ার ইংরেজি, বাংলা শেখা। স্বশিক্ষিত রোকেয়া তাঁর মেধা ও সমাজসচেতনতার গুণে একজন মননশীল ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্মী ও সমাজসেবাব্রতী নারী হিসাবে আবির্ভূত হন।
বাঙালি মুসলমান সমাজে সেকালে নারীর অবস্থান ছিল অবরোধের কঠিন অনুশাসনে বাঁধা। তার চারপাশে অশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতার প্রাচীর। তার উপর পুরুষশাসিত সমাজের চাপ। কিছু ব্যতিক্রমী পরিবার বাদে মেয়েদের জন্য শিক্ষার দরজা ছিল বন্ধ। জীবনের একাধিক পর্বে নারী সর্বদাই পুরুষ শাসিত, যেমন বিবাহপূর্ব সময়ে পিতা, বিবাহিত জীবনে স্বামী, স্বামীর অবর্তমানে বৃদ্ধ বয়সে পুত্রের অধীন।
রক্ষণশীল পরিবারের পরিবেশ সম্ভবত রোকেয়াকে এই বাস্তবসত্য বুঝতে সাহায্য করেছিল যে পুরুষ নারীর প্রভূ। নারীর নিজস্ব স্বাধীন সত্তা বলতে কিছু নেই, পুরুষের নির্দেশে ও পুরুষশাসিত সমাজের বিধান মেনে পারিবারিক জীবনের ঘানি টেনে চলা তার একমাত্র কাজ, বলা যায় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন। নারী বিনা প্রতিবাদে সব মেনে নিয়েছে এমন ভেবে যে এটাই তার নিয়তি।
এই তামসিক পরিবেশ মেনে নিতে পারেন নি রোকেয়া। এই অন্ধকার দূর করতে শিক্ষার আলো সবচেয়ে জরুরি বলে মনে হয়েছে। নারীকে অশিক্ষা ও সংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে নারীর জন্য প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষা এবং সেই সঙ্গে পরিবারে সমাজে আপন অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা এবং তা আদায় করা। নারীশিক্ষা ও নারীস্বাধীনতা এ দু'য়ের মধ্যে কোনটা রোকেয়ার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে তা বলা কঠিন। আমার বিশ্বাস দুটোতেই তিনি সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ একটির সঙ্গে অপরটি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। মন থেকে সংস্কারের অন্ধকার দূর না হলে নিজের অধিকার দাবির চেতনাও প্রকাশ পায় না। অধিকার আদায় তো দূরের কথা।
তাই স্কুল প্রতিষ্ঠার অন্তত বছর আটেক আগে নারীকে আত্মসচেতন করে তুলতে তিনি লেখেন অসাধারণ দীর্ঘ প্রবন্ধ 'অলঙ্কার না Badge of slavery।