বাংলাদেশের মেঘনা নদীর ইলিশে পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা।
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তাঃ২১ জুন ২০২৫
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নদীমুখে ধরা ইলিশে পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। শুধু তা-ই নয়, ইলিশের শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যাডমিয়াম, সিসা, পারদ, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশের অন্ত্রে, যকৃতে, এমনকি পেশিতেও পাওয়া গেছে ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিক কণা, যেগুলোকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই কণা প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল, সিনথেটিক কাপড়, টায়ার কিংবা কসমেটিকস থেকে এসে পড়ে নদী ও সাগরে। সেখান থেকেই তা গিলে ফেলে মাছ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় যে সামান্য পরিমাণ নমুনায় এত সংখ্যায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, তা সত্যিই ভাবনার বিষয়। প্লাস্টিক একটি যৌগ। এটি তাপ পেলে এর সঙ্গে থাকা নানা উপাদান ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। প্লাস্টিকে থাকা ‘বিসফেনল এ’ (বিপিএ), থ্যালেট, পলিস্টাইরিন জাতীয় উপাদানগুলো হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে, ক্যানসার ডেকে আনে, এমনকি শরীরের কোষের জেনেটিক গঠনও বদলে দেয়।
গবেষণা প্রতিবেদনটি গত এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী ওয়াটার, এয়ার সয়েল পলিউশন–এ। গবেষণাটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অ্যাকুয়াটিক জুওলজি রিসার্চ গ্রুপ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের একদল বিজ্ঞানী।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘জল এবং স্থল উভয় পরিবেশেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভয়ানক দূষণ আমরা দেখছি। এবারের গবেষণায় আমরা দেখতে চেয়েছি ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণের প্রভাবে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের কী অবস্থা। যেকোনো প্রাণী একটি দূষণে যখন আক্রান্ত হয়, স্বাভাবিকভাবে প্রাণীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় এবং স্বভাবত অন্যান্য দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে পড়ে। আমাদের এই গবেষণা আমাদের নিজেদের সচেতন হতে সাহায্য করার জন্য, এটা কাউকে ভয় দেখানোর জন্য নয়। বরং এর মাধ্যমে আমরা জলজ প্রতিবেশের নাজুক অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই প্রতিবেশের সুরক্ষায় আমাদের যে অনেক কিছু করতে হবে, এ গবেষণা সেই তাগিদ সৃষ্টি করেছে।’