যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি ভিসায় নতুন নির্দেশিকা, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও স্বস্তি
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা : ২১ অক্টোবর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটুকরো বাংলাদেশ। ছবি: ফেসবুক
গত ১৯ সেপ্টেম্বর দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত এইচ-১বি ভিসার ওপর বার্ষিক এক লাখ ডলারের ফি আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও গবেষণার মতো খাতগুলোতে প্রতিবছর বিদেশি দক্ষ কর্মীরা কাজের সুযোগ পান। এইচ-১বি ভিসা তিন বছর মেয়াদের হয়ে থাকে, যা পরে সর্বোচ্চ ছয় বছর বাড়ানো যায়। আর এ সময়ের মধ্যে চাইলে গ্রিন কার্ডের আবেদনও করতে পারেন কর্মীরা। এ কারণে এই ভিসার জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে আবেদন পড়ে।
ট্রাম্পের এই ফি আরোপের ঘোষণা বিশ্বজুড়ে এইচ-১বি ভিসাধারী এবং প্রত্যাশী দক্ষ কর্মীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে। পরে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, বার্ষিক নয়, এককালীন হবে এই ফি এবং যারা এরই মধ্যে দেশটিতে অবস্থান করছেন বা ভিসাটি নিয়েছেন তাঁদের আর ফি দিতে হবে না। শুধু সম্পূর্ণ নতুন আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে এই ফি।
প্রশাসনের এ ঘোষণায় ভিসাধারীদের মনে স্বস্তি এলেও যাঁরা এইচ-১বি ভিসা প্রত্যাশী বা অপেক্ষমাণ তাঁদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। দক্ষ কর্মী খাতে প্রতি কর্মীর পেছনে এক লাখ ডলার ফি স্পনসর করবে কি না মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো—এ চিন্তায় পড়ে যান কর্মীরা। এই কর্মীগোষ্ঠীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশিও রয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকেও খুব কমসংখ্যক দক্ষ কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ পান, তবে শিক্ষার্থী হিসেবে দেশটিতে গিয়ে পরে কর্মী ভিসা নেওয়ার সংখ্যাই বেশি। যাঁদের মধ্যে অনেকে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য দ্বিতীয় দফায় পড়া শুরু করেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে এফ-১ ভিসায় পড়াশোনা শেষে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং বা ওপিটিতে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এ সময়ের পর যদি ওই স্নাতক ডিগ্রিধারীকে কোনো কোম্পানি চাকরিতে রাখতে চায়, তাহলে এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।
২০২৪ সালের ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১৭ হাজার ৯৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। যা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের তুলনায়, যা ২৬ শতাংশ বেশি। এ বৃদ্ধি বাংলাদেশকে এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো দেশের তালিকায় ১৩তম স্থান থেকে অষ্টম স্থানে নিয়ে আসে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এইচ-১বি ভিসা নীতির কারণে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করার পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। প্রচুর শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পর দেশে ফেরত আসার কথা ভাবতে হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে মার্কিন ভিসাধারীদের এইচ-১বি ভিসা নিয়ে সুখবর দিল ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন নাগরিকত্ব ও ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস) জানিয়েছে, যারা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার জন্য স্পনসরড হয়েছেন, তাঁদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের গত মাসে আরোপিত এক লাখ ডলারের ভিসা ফি প্রযোজ্য হবে না।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা এই বিতর্কিত প্রেসিডেনশিয়াল প্রোক্লেমেশন নিয়োগকর্তা এবং ভিসাধারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, এর আগে মার্কিন সংস্থাগুলোর দেওয়া নির্দেশিকায় অনেক প্রশ্নের উত্তর ছিল না।
গতকাল ২০ অক্টোবর প্রকাশিত নতুন নির্দেশিকায় ইউএসসিআইএস স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই বিশাল ফি ‘চেঞ্জ অব স্ট্যাটাস’-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কোনো ব্যক্তি যখন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করে এক ক্যাটাগরি থেকে অন্য ক্যাটাগরিতে ভিসা পরিবর্তন করেন, তাঁর ক্ষেত্রে এই এইচ-১বি ভিসার ফি আরোপ হবে না। এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসা থেকে এইচ-১বি স্ট্যাটাসে পরিবর্তন করলে এক লাখ ডলার ভিসা ফি লাগবে না। এ ছাড়া, যাঁরা আমেরিকায় থাকার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই ফি লাগবে না।
তবে, সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, যারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আছেন বা যাঁদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের আগে দেশ ছাড়তে হবে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ফি প্রযোজ্য হবে। তবে বর্তমানে এইচ-১বি ভিসা ধারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বা প্রস্থান করতে বাধা পাবেন না।
ট্রাম্প প্রশাসন আরও জানিয়েছে, এফ-১ অর্থাৎ শিক্ষার্থী ভিসা এবং এল-১ অর্থাৎ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিদেশি শাখায় কর্মরত কর্মীর ক্ষেত্রে এইচ-১বি ভিসা পেতে চাইলে কোনো ফি দিতে হবে না