যেসব কাগজপত্র না থাকলে হারাতে পারেন আপনার জমির মালিকানা!সতর্ক করল নতুন ভূমি আইন
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তাঃ ১৮অক্টোবর ২০২৫;
ভূমি সংক্রান্ত মামলা, দখল-বিরোধ কিংবা পারিবারিক বিবাদ এসব সমস্যার পেছনে বড় কারণ প্রায়ই একটাই, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব। নতুন ভূমি আইন অনুযায়ী, জমির মালিকানা, দখল বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নথি না থাকলে ভবিষ্যতে জমি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। তাই এখন থেকেই সচেতন হয়ে জমি-সংক্রান্ত প্রতিটি দলিল সঠিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
জমির দলিল ও বায়া দলিল
জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে মূল প্রমাণপত্র হলো দলিল। এটি রেজিস্ট্রার অফিসে সম্পাদিত, সাক্ষীর স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রারের সিলমোহরযুক্ত না হলে মালিকানা প্রমাণ করা যায় না। শুধু তাই নয়, দলিলের পূর্ববর্তী নথিগুলো যেগুলোকে বায়া দলিল বলা হয় তাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে এসব দলিলের সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করা সম্ভব।
খতিয়ান ও পর্চা
জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ধারণে খতিয়ান বা পর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। জরিপ শেষে ভূমি অফিস থেকে ইস্যু করা মূল নথিকেই বলা হয় খতিয়ান, আর মালিক নিজে সংগ্রহ করলে সেটি পর্চা নামে পরিচিত। খতিয়ানই জমির সঠিক রেকর্ড বহন করে এবং আইনি প্রমাণ হিসেবে এটি সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য।
দাখিলা বা খাজনার রশিদ
প্রত্যেক জমির কর প্রদানের প্রমাণপত্র হলো দাখিলা বা খাজনার রশিদ। তহসিল অফিস থেকে ইস্যুকৃত এই রশিদ জমির বর্তমান মালিককে বৈধ প্রমাণ করে। জমি বিক্রির সময় দাখিলা দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এমনকি জমি খাজনামুক্ত হলেও নামমাত্র ফি প্রদান করে দাখিলা সংগ্রহ করা যায়, যা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি।
ওয়ারিশ সনদ ও সাকসেসন সার্টিফিকেট
উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানা প্রমাণে ওয়ারিশ সনদ অপরিহার্য। এটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের স্বাক্ষরে ইস্যু হয়। আর আদালত কর্তৃক প্রদত্ত উত্তরাধিকার প্রমাণপত্রকে বলা হয় সাকসেসন সার্টিফিকেট, যা আইনি দিক থেকে আরও শক্তিশালী।
মিউটেশন বা নামজারি
জমির মালিকানা হস্তান্তরের পর নতুন মালিকের নামে সরকারি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াই হলো মিউটেশন বা নামজারি। এটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে করতে হয়। নামজারি না থাকলে জমির ওপর মালিকানা দাবি আইনত প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
আদালতের রায় ও ডিক্রি
ভূমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার পর আদালতের রায় বা ডিক্রি-ই চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়। জমি নিয়ে কোনো বিরোধ থাকলে আদালতের এই রায়ের ভিত্তিতেই মালিকানা নির্ধারিত হয়।
মৌজা ম্যাপ ও বাস্তব খণ্ডচিত্র
জমির সঠিক অবস্থান ও সীমানা বোঝার জন্য মৌজা ম্যাপ অপরিহার্য। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে এটি সংগ্রহ করা যায়। এতে জমির ভৌগোলিক অবস্থান, সীমানা ও প্রতিবেশী প্লট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
জমির দখল ও ব্যবহার
আইন বলছে, জোরপূর্বক দখল নয়, বৈধ মালিকানার ভিত্তিতেই জমি ব্যবহারের অধিকার স্বীকৃত। বৈধ দখলের প্রধান প্রমাণ হলো দাখিলা, যা নিয়মিত সংরক্ষণ করা উচিত।