বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের
পুরনো নেতৃত্বই বহাল থাকছে, নাকি পরিবর্তন হয়ে আসছে নতুন মুখ- এ নিয়ে কৌতুহল এখন নেতাকর্মীদের।
এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক আদালত বার্তাঃ ২৩ ডিসেম্বর ২০২।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি পদে বহাল রেখে কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে আসবে নতুন নেতৃত্ব। তবে গুরুত্বপূর্ণ অন্য পদগুলোতে কি পুরনো নেতৃত্বই বহাল থাকছে, নাকি পরিবর্তন হয়ে আসছে নতুন মুখ- এ নিয়ে কৌতুহল এখন নেতাকর্মীদের।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার সহযাত্রী হয়ে যারাই নৌকার হাল ধরবেন, তাদেরকে চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করে আগামী দিনে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলা করে দলকে আবার বিজয়ী অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
দলের জাতীয় কাউন্সিল থেকেই ২০২৪ সালের নির্বাচনী দিক-নির্দেশনা এবং দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ কি কাজ করবে, সেসব বিষয়গুলো নেতাকর্মীদের জানানো হবে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সম্মেলনের স্থান পরিদর্শন করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপকমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্য সচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চের সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর কাল সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসন গ্রহণের পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন।
পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রমোশন দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। যারা দলে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের যোগ্যতারভিত্তিতে প্রমোশন দেবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বয়স বেশি হওয়ায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কার্যনির্বাহী সদস্য থেকে বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। একই সঙ্গে নারী ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে বাদ পড়তে পারেন আওয়ামী লীগের দুই-একজন সাংগঠিক সম্পাদক।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম থাকলেও এই পদে নেতাকর্মীদের আলোচনায় উঠে এসেছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য- ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফের নাম।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি প্রমোশন (পদোন্নতি) পেয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া কাজের মূল্যায়নে ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, বন ও পরিবশে বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও প্রমোশন পেতে পারেন। এছাড়া প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। এছাড়া লিটন চৌধুরী ও সাবেক যোগযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে দিতে পারেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, বাকি দুটিতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে মঞ্চে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। মূলমঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজনের জন্য এ বছর বিদেশিদের দাওয়াত করা হচ্ছে না। তবে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও নেতাকর্মীর ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন হবে একদিন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজেট কমানো হয়েছে। এবার বাজেট ৩০ লাখ কমিয়ে বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।
২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।