1. multicare.net@gmail.com : আদালত বার্তা :
মামলা চলাকালীন আপোষ-মীমাংসা করার আইনি প্রক্রিয়া - আদালত বার্তা
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলি; জনমনে আতঙ্ক মেট্রোরেল ১ ও ৫ উত্তর লাইনের কাজ দ্রুত শুরু করতে জাইকার আহ্বান মুঘল আমলে ঢাকার প্রবেশদ্বারে নির্মত দুর্গের ইতিহাস দেশের সব আদালতের অনলাইন কার্যতালিকা নিয়মিত হালনাগাদের নির্দেশ। মামলা চলাকালীন আপোষ-মীমাংসা করার আইনি প্রক্রিয়া ইসিকে পত্রিকা ও অনলাইন প্রতিনিধিরা গোপন নির্দেশনা নয়, নজরদারি ও সাইবার সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ  জীবনে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা কেউ করে দেয় না, নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন : সরব আইনজীবীরা, নীরব এডহক কমিটি স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে প্রতিদিনের যেসব অভ্যাস। অন্যের ওপর দায় চাপানো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যাস : ভারত

মামলা চলাকালীন আপোষ-মীমাংসা করার আইনি প্রক্রিয়া

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

 

মামলা চলাকালীন আপোষ-মীমাংসা করার আইনি প্রক্রিয়া
এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক সম্পাদক আদালত বার্তাঃ৭ অক্টোবর ২০২৫

আপোষ-মীমাংসা হলো পারস্পরিকভাবে আইনি সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত উপায়। আইনে আপোষ-মীমাংসার বিধান দেওয়া আছে। যখন বাদী ও বিবাদী উভয়েই আপোষ-মীমাংসা করতে চান, তখন তারা মামলা চলাকালীন এটি করতে পারেন। স্থানীয়ভাবে বা বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আপোষ-মীমাংসা করে আদালতকে অবগত করা যায়। আদালত এটি গ্রহণ করেন এবং প্রাধান্যও দেন। বাংলাদেশে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের মামলায় আপোষ-মীমাংসার আইনগত বিধান আছে।

আপোষ-মীমাংসা কি?

আপোষ-মীমাংসা হলো দু’পক্ষের মধ্যে আইনি বিরোধ সমাধানের সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুত উপায়। এতে মামলা চলাকালীন উভয় পক্ষ স্বেচ্ছায় শর্ত নির্ধারণ করে সমাধান করতে পারে। আদালত আপোষ-মীমাংসাকে আইনি স্বীকৃতি দেয় এবং তা গ্রহণের পর মামলা আর চলবে না।

ফৌজদারি মামলায় আপোষ-মীমাংসা: আইনি ভিত্তি ও প্রক্রিয়া: 

ফৌজদারি মামলায় আপোষ-মীমাংসা হলো আইনি সমস্যার দ্রুত ও সহজ সমাধানের অন্যতম পথ। এটি মূলত ফৌজদারী কার্যবিধি (CrPC) ধারা ৩৪৫ অনুযায়ী প্রযোজ্য। এই ধারা নির্দিষ্ট করেছে কোন কোন অপরাধে মামলা চলাকালীন উভয় পক্ষ পরস্পরের সম্মতিতে আপোষ-মীমাংসা করতে পারে।

আপোষযোগ্য অপরাধ: ধারা ৩৪৫ অনুযায়ী সাধারণ ও তুলনামূলক ছোটখাট অপরাধে আপোষ-মীমাংসা করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে হানাহানি, চুরি, ক্ষুদ্র প্রতারণা, ঝগড়াঝাটির কারণে ক্ষতি ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে বাদী চাইলে মামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে পারেন এবং উভয় পক্ষের সম্মতিতে আপোষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যায়।

আপোষযোগ্য নয় এমন অপরাধ: গুরুতর ও সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ অপরাধ যেমন খুন, ধর্ষণ, দস্যুতা, তাজা হত্যা বা বড় ধরনের সংবেদনশীল অপরাধে আপোষ-মীমাংসা আইনত অনুমোদিত নয়। এই ধরনের মামলায় শুধুমাত্র আদালত কর্তৃক বিচারের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দেওয়ানি মামলায় আপোষ-মীমাংসা: দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ আইনি সমাধান:

দেওয়ানি মামলায় আপোষ-মীমাংসা হলো বিরোধ সমাধানের একটি সহজ ও দ্রুত উপায়। এটি মূলত বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (Alternative Dispute Resolution – ADR) পদ্ধতির আওতায় প্রযোজ্য। মামলা চলাকালীন উভয় পক্ষের সম্মতিতে আপোষ-মীমাংসা করে আদালতকে অবগত করা যায়। আদালত এটি গ্রহণ করলে মামলা আপোষনামার শর্ত অনুযায়ী সমাধান হয় এবং আর চলমান থাকে না।

আপোষ-মীমাংসার প্রক্রিয়া:

আপোষের আগ্রহ প্রকাশ: মামলার কোনো এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ আপোষে যেতে চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে অথবা সরাসরি আদালতে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যস্থতাও গ্রহণযোগ্য।

শর্ত নির্ধারণ: উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে আপোষের শর্ত নির্ধারণ করে লিখিত “আপোষনামা” তৈরি করবে। শর্তের মধ্যে ক্ষতিপূরণ, সম্পত্তি হস্তান্তর, ঋণ পরিশোধ, ব্যবসায়িক লেনদেন বা অন্যান্য সমাধানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আদালতে দাখিল: আপোষনামা আদালতে দাখিল করতে হবে। আদালত নিশ্চিত করে যে শর্তগুলো উভয় পক্ষের সম্মত ও আইনসঙ্গত।

আদালতের গ্রহণ: আদালত উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বা আইনজীবীর মাধ্যমে আপোষ প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। অনুমোদনের পর আপোষনামা আইনি কার্যকারিতা পায়।

মামলা সমাধান: আদালত আপোষ গ্রহণ করলে মামলা আপোষনামার শর্ত অনুযায়ী নিষ্পত্তি হয়। এর পর মামলা আর চলমান থাকে না এবং উভয় পক্ষের আইনি অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

মামলা দায়েরের পর আপোষ-মীমাংসা করা যাবে কি?

হ্যাঁ। মামলা দায়েরের পর যেকোনো সময় আপোষ-মীমাংসা করা সম্ভব। এটি আদালতের সম্মুখে, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যস্থতায় বা বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে করা যেতে পারে।

আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার: আপোষ-মীমাংসা করলে বাদী চাইলে মামলা প্রত্যাহার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে বিরোধ সমাধান হয়েছে, ভুল বোঝাবুঝি মিটেছে, সুসম্পর্ক পুনঃস্থাপন হয়েছে বা উভয় পক্ষ আর মামলা চালাতে আগ্রহী নয়। এই অবস্থায় বিজ্ঞ আদালতে দরখাস্ত দাখিল করে মামলা প্রত্যাহার করা যায়।

আপোষ-মীমাংসা হলো মামলা চলাকালীন দ্রুত, সহজ ও আইনি সমাধানের কার্যকর মাধ্যম। ফৌজদারি মামলায় ধারা ৩৪৫ অনুযায়ী নির্দিষ্ট অপরাধে এটি প্রযোজ্য, আর দেওয়ানি মামলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) পদ্ধতির মাধ্যমে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে করা যায়।

মামলার কোনো এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ আইনজীবীর মাধ্যমে বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যস্থতায় আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। শর্ত নির্ধারণের পর লিখিত “আপোষনামা” আদালতে দাখিল করতে হয়। আদালত যাচাই ও অনুমোদন করলে মামলা আপোষনামার শর্ত অনুযায়ী সমাধান হয় এবং আর চলমান থাকে না। আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক মসৃণ থাকে, সময় ও খরচ কমে এবং আইনি ঝামেলা এড়ানো যায়। এজন্য এই প্রক্রিয়াটি মামলার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট