1. multicare.net@gmail.com : আদালত বার্তা :
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
কপিরাইট ইনফোর্সমেন্ট খুবই জরুরি: প্রেস সচিব ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে যাচ্ছে না বিএনপি: টুকু সংস্কার কমিশন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেরও সুপারিশ  স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটারের স্বাক্ষর ৫০০ করার সুপারিশ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও দেশের সাংবিধানিক নাম বদলের সুপারিশ সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ–ভারতের উদ্বেগ আমলে না নিয়েই কি তিব্বতে বাঁধ নির্মাণ করবে চীন? গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জ থানায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না’ সাকরাইন বা পৌষ সংক্রান্তি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব

চীনা অধ্যাপকের মেয়ে বাংলায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন বিশ্বভারতীতে, ছোটো মেয়ের নাম রাখলেন রবীন্দ্রনাথ 

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

চীনা অধ্যাপকের মেয়ে বাংলায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন বিশ্বভারতীতে, ছোটো মেয়ের নাম রাখলেন রবীন্দ্রনাথ 

নিউজ ডেস্ক,  আদালত বার্তাঃ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
১৯২৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, একজন চৈনিক যুবক এলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। তাঁকে দেখে উদ্বেল হয়ে উঠলেন রবীন্দ্রনাথও। এরপর, রাতের ট্রেনেই সেই চৈনিক যুবক চলে এলেন শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথ যে তাঁকে বিশ্বভারতীতে চীনাভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই আমন্ত্রণের টানেই তো তাঁর এত দূর ছুটে আসা। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছেন, চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সুপ্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে পরিচিত হোক বিশ্বভারতীর ছাত্ররা। এই চাওয়া সেই যুবকের কাছেও স্বপ্নের মতো। তাই তিনি ছুটে এসেছেন ভারতে। রাতের ট্রেন ধরে চলে এসেছেন শান্তিনিকেতন। সেই চৈনিক যুবকের নাম তান-য়ুন শান। যাঁর হাত ধরেই পরে ভুবনডাঙার লাল মাটিতে জন্ম নেবে ‘চীনা ভবন’।
সে এক আশ্চর্য গল্প। তান-য়ুন শানের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দেখা হল ১৯২৭ সালে, সিঙ্গাপুরে। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে প্রস্তাব দিলেন বিশ্বভারতীতে আসার। মুগ্ধ তান সেদিনই হয়তো মনঃস্থির করে ফেলেছিলেন। ভারতে এসে চীনা ভাষা শেখানোর পাশাপাশি শুরু হল সংস্কৃত পড়া। এই দেশকে, তার ইতিহাসকে না চিনলে যে চলবে না। ১৯৩১ সালে ফের দেশে ফিরলেন তান। সে অবশ্য ‘চীনা ভবন’ প্রতিষ্ঠার জন্যই। হংকঙে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘সিনো-ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি’। চীনে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করলেন ‘চীনা ভবন’ প্রতিষ্ঠার জন্য। ভারতে ফেরার সময়ে হাজার হাজার চীনা বইও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন তান। এনেছিলেন দুর্লভ পুঁথি, জাইলোগ্রাফে ছাপা তিব্বতি ত্রিপিটক। তাঁর উদ্যোগেই গড়ে উঠল ‘চীনা ভবন’। তারপরের ঘটনা তো ইতিহাস। রানী চন্দ লিখছেন, “চীনে পণ্ডিত, চীনে শিল্পী, ছাত্র-শিক্ষকে বাড়ি ভরে গেল।’’
শান্তিনিকেতনে আসার কিছুদিনের মধ্যেই তান দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে। সন্তানেরা যাতে এই ভূখণ্ডের শিকড় চিনতে শেখে, সেদিকে সবটুকু খেয়াল ছিল তাঁর। বড়ো মেয়ে তানওয়েন আরো বড়ো হয়ে ভর্তি হল বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগে। শুধু তাই নয়, এম এ-তে হল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। তাঁর লেখা পড়ে কে তখন বিশ্বাস করবে, চৈনিক জিন তাঁর শরীরে!
আর, ১৯৪০ সালে তৃতীয় সন্তান চামেলির জন্ম তো শান্তিনিকেতনেই। তাঁর নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। ফুলের মতো মেয়ের নাম ফুলের নামেই। চামেলির আঁকার হাতটি খাসা। মাঝে মাত্র ২ বছরের জন্য নিজের দেশে গেছিলেন চামেলি। তারপর ফের ফিরে আসা শান্তিনিকেতনে। এটাও তো তাঁর দেশ। বাংলা কি তাঁরও ভাষা নয়? স্কুলের পাট চুকিয়ে চামেলি ভর্তি হলেন কলাভবনে। বিনোদবিহারী ও রামকিঙ্করের প্রিয় ছাত্রী ক্রমে খুঁজে নিলেন নিজস্ব রং-তুলির ভাষা। এরই মাঝে কলাভবনেরই ছাত্র বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী এ রামচন্দ্রনের সঙ্গে বিয়েটিও সেরে ফেলেছেন তিনি। চামেলির আঁকায় যেন ভারতীয় চিত্রকলা ও চৈনিক শিকড়ের মধ্যে আলাপ চলে অবিরত। প্রকৃতি কথা বলে ক্যানভাস জুড়ে। কখনো একটি গাছ, পায়রার ঝাঁক, ঢেউ বা পাহাড়ের সারি। সামান্য রঙ, চীনা কালিতেই কথা বলে ওঠে ছবি। সেই ছবি যেন আসলে সেতু। নিজের শিকড়ে জুড়ে থাকা চীন আর নতুন দেশ ‘ভারতবর্ষের’ মধ্যে।
আজকের ভারতবর্ষ আলোড়িত হচ্ছে ‘নাগরিকত্ব’-এর বাছবিচার নিয়ে। কারা এই দেশের প্রকৃত নাগরিক, কারা ‘অনুপ্রবেশকারী’ আর কারাই বা ‘শরণার্থী’! তান-য়ুন শান, তানওয়ান বা চামেলিকে চেনা যাবে এই বয়ানে? কিংবা রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নকে? যে স্বপ্নের টানে ভিন দেশের মানুষ উজিয়ে আসেন বাংলায়, নতুন শিকড় গাঁথেন। চীনা মেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পাঠ করে। আর চামেলি তো এই দেশেরই ভূমিসন্তান…
শান্তিনিকেতনের সেই স্বপ্নজমিন যেন এক অসম্ভব কল্পনার দেশ এখন।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট