বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (১০ অক্টোবর ২০২২) দেশের প্রথম ছয় লেনের দুইটি সেতু উদ্বোধন করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলার সীমান্তে মধুমতী নদীতে ‘মধুমতী সেতু’ এবং নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতু’ উদ্বোধন করবেন
মধুমতী সেতু
———-
মধুমতী নদীর কালনা পয়েন্টে নির্মিত এ সেতুকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ’মধুমতী সেতু’ নাম দিয়েছেন। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সভায় সমাবেশের সাজসজ্জা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ আয়োজনের খুঁটিনাটি নানা বিষয় উঠে আসে।
বহুল কাঙ্ক্ষিত এ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বহতা মধুমতীর স্রোতধারায় বিভক্ত নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন হবে। এ সেতুর ফলে নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ১০ জেলার মানুষের ঢাকায় যাতায়াতে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এখানকার মানুষ আশা করছেন, মধুমতী সেতুর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে সাধিত হবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, আর্থসামাজিক চালচিত্র আমূল বদলে যাবে।
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে।
১২টি পিলারের ওপরে ৬৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৭.১ মিটার প্রস্থের এ সেতুকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে এটির ১৫০ মিটার স্টিলের নেল-সন লসি আর্চ। ধনুকের মতো বাঁকা এ স্প্যানটি জাপানের নিপ্পন কোম্পানি ভিয়েতনামে তৈরি করেছে। সেতুতে মোট এবাডমেট রয়েছে ২টি, ১৩টি স্প্যান ও ১৬০টি গার্ডার। সেতুর ৪.২৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে চলবে দ্রুতগতির যান, বাকি দুটিতে ধীর গতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচল করবে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৬০ কোটি টাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা
নাসিম ওসমান সেতু
———-
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার ওপর দৃষ্টিনন্দন নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। ৬ লেনের এ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক দুই নয় কিলোমিটার আর প্রস্থ ২২ দশমিক এক পাঁচ মিটার। ওয়াকওয়েসহ সেতুতে রয়েছে ৩৮টি স্প্যান। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
উদ্বোধনের পরপরই জনসাধারণের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে।
কাঙ্ক্ষিত এই তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হলে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পপণ্য খুব সহজে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় দ্রুত পৌঁছে যাবে। এছাড়া শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে কমবে ভয়াবহ যানজট। পাশাপাশি শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলার ও নৌকা দুর্ঘটনা কমে যাবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ইত্যাদি থেকে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, মংলা, বরিশাল এবং অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের জন্য মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর-মুক্তারপুর, মুন্সীগঞ্জ-টঙ্গীবাড়ী-লৌহজং ও মাওয়া হয়ে মোগরাপাড়া, মদনপুর, কাঁচপুর ও ডেমরাকে সংযুক্ত করবে। সেতুটি চালু হলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ হবে। তখন দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের যানবাহনগুলোকে নারায়ণগঞ্জ শহরে না ঢুকে মদনপুর হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া দিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে পারবে।