বিকেলে ওয়ালী ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকা নিউ মার্কেট এলাকায় পথসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ‘লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক ও শিল্পীরা ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এদিকে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালির আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে চলছিল পূর্ব পাকিস্তান। ঘরে ঘরে উড়ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত নতুন পতাকা। অসহযোগ আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছিলেন, তাদের স্মরণে পালন কর হচ্ছিল শোক। সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তোলা হয়েছিল কালো পতাকা। এমনকি প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনসেও এদিন কালো পতাকা উড়ানো হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। জরুরি কাজের বিবেচনায় বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসা কেন্দ্র খোলা রাখা হয়। নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদরদফতরের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে মহাসচিব উ-থান্টের কাছে স্মারকলিপি দেন।
বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকেরা চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। সামরিক সজ্জা অব্যাহত রেখে বাংলার বুকে এক জরুরি অবস্থা কায়েম রাখার রেখেছে।’
স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে বাঙালি সৈন্য, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি পাকিস্তানি প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়।
জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মৌলভী সৈয়দ আহমেদ, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ’গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আসা যে কোনো সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামে বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ হয় পরিষদ।
করাচিতে ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসবেন তিনি। ক্ষমতা যাতে হস্তান্তর করা যায়, সে জন্য আগে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের চেষ্টা করবেন।
করাচি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে টেলিগ্রাম/টেলিফোন বার্তায় আপসে বসার আহ্বান জানান এয়ার মার্শাল আসগর খান। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। পাকিস্তানের পতাকার মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেনানিবাস।’
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ওয়েবসাইট, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি ১৯৭১-২০১১’ -মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।