আদালতের এজলাস থেকে ‘লোহার খাঁচা’ সরাতে আইনি নোটিশ
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা : ১৬ অক্টোবর ২০২৩
আদালতের এজলাস থেকে লোহার খাঁচা সরাতে আইনি নোটিশ ।
আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানোর জন্য সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। সোমবার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ তথ্য জানিয়েছেন।
১০ আইনজীবীর পক্ষে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান আইনজীবী শিশির মনির। সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদসহ আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণ করার অনুরোধ করা হয়েছে। তা না হলে মৌলিক অধিকারের সুরক্ষার্থে হাই কোর্ট বিভাগে রিট আবেদন দায়ের করা হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, দেশের সিংহভাগ আইন ও আদালতের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি। আদালতে আসামি হাজিরার জন্য কাঠগড়ার প্রচলন ব্রিটিশ আমলেই শুরু হয়। তবে দুর্ধর্ষ আসামি, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করানো হত। বিচার শেষে দোষীকে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে- এমন ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু বিচার চলাকালে আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। ভারতেও সাধারণ আদালতের কাঠগড়ায় লোহার খাঁচার ব্যবহার নেই।
বাংলাদেশের কোনো আইনে কাঠগড়ায় লোহার খাঁচার ব্যবহারের ‘বিধান নেই’ জানিয়ে নোটিসে বলা হয়, ‘তবে কারা আইন, ১৮৯৪ এর ৫৬ ধারা মতে জেলে বন্দি কয়েদিকে সরকারের অনুমোদনক্রমে লৌহ-শৃঙ্খলে আটক করে রাখার বিধান রয়েছে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই অভিযুক্তকে প্রকাশ্য আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে অভিযুক্ত ব্যক্তির ‘প্রিন্সিপাল অব প্রিঅ্যাজামশন অব ইনোসেন্স’ ভঙ্গ করা হচ্ছে; যা একইসঙ্গে দেশের প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের পরিপন্থি।
নোটিশে বলা হয়েছে, দেশি-বিদেশি আইন, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও উচ্চ আদালতের নজিরগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় আদালতে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচার ব্যবহার অমানবিক, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদের ‘পরিপন্থি’। মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতে লোহার খাঁচা অপসারণ একান্ত প্রয়োজন, বলছেন নোটিশদাতারা।
নোটিশ পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী হলেন জিএম মুজাহিদুর রহমান, মুহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ নোয়াব আলী, আজিমুদ্দিন পাটোয়ারী, মোহাম্মদ সাজ্জাদ সারোয়ার, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মোহাম্মদ মিজানুল হক ও আবদুল্লাহ সাদিক।
উল্লেখ, কোনো মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতের ডকে (লোহার খাঁচা) তোলা হয়। এমনকি জামিনের পরেও তারিখে তারিখে হাজিরার দিন আসামি এই ডকে উঠেন।