1. multicare.net@gmail.com : আদালত বার্তা :
সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১০:১৩ অপরাহ্ন

আমেরিকা কি আরেকটি গৃহযুদ্ধের মুখে

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৪২ বার পড়া হয়েছে

আমেরিকা কি আরেকটি গৃহযুদ্ধের মুখে
এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক আদালত বার্তা : ০৫ আগস্ট ২০২৩
চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শেষ হয় কেন্দ্রীয় শাসকদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। ছবি: আমেরিকান ব্যাটেলফিল্ড ট্রাস্ট
চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শেষ হয় কেন্দ্রীয় শাসকদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। ছবি: আমেরিকান ব্যাটেলফিল্ড ট্রাস্ট
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার শুরু হয়েছে একাধিক মামলায়। এর মধ্যে একটি হলো ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ। এই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে ফেডারেল আদালতে। এর আগে ও পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সঙ্গীরা যেভাবে সরকারি কৌঁসুলি ও সে দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ শুরু করেছেন তাতে পুরো বিষয়টি ঘোলাটে হতে শুরু করেছে।

এরই ফলশ্রুতিতে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক জেসন ওপাল তাঁর এক লেখায় প্রশ্ন তুলেছেন, আমেরিকা কি তাহলে আরেকটি গৃহযুদ্ধের মুখে পড়তে চলেছে?

শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাদের দ্বারা আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠ বানানোর যে সস্তা জনপ্রিয় পথ ডোনাল্ড ট্রাম্প ধরেছেন, তাতে এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। এই কাজটি করার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি ট্রাম্প। ১৮৬০ সালে দাস প্রথা রদ হওয়ার পর আমেরিকা দক্ষিণের ১১টি অঙ্গরাজ্য তা মানতে অস্বীকার করেছিল। সাউথ ক্যারোলিনা তো বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। সেখান থেকে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত। চার বছরের বেশি সময় (এপ্রিল, ১৮৬১- মে, ১৮৬৫) ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষ হয় কেন্দ্রীয় শাসকদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৪ এপ্রিল, ১৮৬৫ তারিখে আততায়ীর হামলায় নিহত হন জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। এই বিজয় থেকেই আমেরিকার প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্র হওয়ার সূত্রপাত।

কিন্তু ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি আমেরিকার পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা ও তাণ্ডব ১৬২ বছর আগের স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছিল। ওই দিন মার্কিন কংগ্রেসের যৌথসভায় জো বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। ট্রাম্পের উগ্র শ্বেতাঙ্গ সমর্থকদের উদ্দেশ্য ছিল এই অধিবেশন বানচাল করে দিয়ে ভোটের ফল বাতিল করে দেওয়া। কারণ বাইডেন যতই ভোটে জিতুন না কেন, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া তিনি হোয়াইট হাউসে ঢুকতেই পারতেন না। আসলে ট্রাম্পের সমর্থকেরা আমেরিকার জনগণের রায়, সংবিধান, কংগ্রেস- কিছুকেই তোয়াক্কা করেন না। তাঁরা ‘এক দেশ এক নেতা’ তত্ত্বে বিশ্বাসী। আর সেই নেতা হলেন ট্রাম্প।

আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এপির সৌজন্যে
আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এপির সৌজন্যে
আমেরিকা এমনিতেই অভিবাসীদের দেশ হিসেবে পরিচিত। কলম্বাসের আমেরিকা সন্ধানের পর ইউরোপ থেকে দলে দলে ভাগ্যান্বেষীরা আটল্যান্টিক পাড়ি দিয়ে হাজির হয়েছিল দেশটির নানা অংশে। পরে বিপুল উর্বর জমিতে শস্য ফলানোর জন্য আফ্রিকা থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কালো চামড়ার মানুষদের, যারা কালক্রমে দাস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের কাছে। ঠিক একই শ্বেতাঙ্গ প্রভুত্ব আমেরিকায় ফিরিয়ে আনতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেসন ওপেল লিখছেন, কিন্তু গত এক শ বছর, বিশেষ করে গত ৫০ বছরে আমেরিকার জন-বৈচিত্র অনেক পাল্টে গেছে। সাদা-কালোর সরল হিসাব পাল্টে এখন অনেক বৈচিত্রে ভরা দেশটির সংস্কৃতি। আর সংবিধান অনুযায়ী, সব আমেরিকান সমান। ফলে দ্বন্দ্বটা ১৬২ বছর আগের চেয়ে জটিল।

লক্ষ্যনীয় হলো, এবারও যারা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ নিয়ে সোচ্চার তারা দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোর ছোট ছোট শহরের বাসিন্দা। এরা শ্বেতাঙ্গ, খ্রিষ্টান ও সোজাসাপটা। সব মিলিয়ে ১৮৬০ সালের সাথে কেমন যেন মিল খুঁজে পাচ্ছেন অধ্যাপক ওপেল। নিউইয়র্কের মতো একটি বৈচিত্রপূর্ণ আন্তর্জাতিক শহরের বাসিন্দা হয়েও ট্রাম্প সাহেব দক্ষিণের এই উন্মাদনা ও ক্ষোভকে ঠিকই বুঝেছেন। সেজন্য তিনি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু প্রতিশ্রুতি নয় বলেছেন, একমাত্র তিনিই পারবেন এই কাজটি করতে। গত মার্চ মাসে কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির বার্ষিক সভায় ট্রাম্প অত্যন্ত আস্থার সাথে বলেছেন, ‌‘আমি আপনাদের যোদ্ধা। আমি আপনাদের ন্যয় বিচার। আর যারা এর বিরুদ্ধে তাদের জন্য আমি আপনাদের প্রতিশোধ।’

অধ্যাপক ওপেল বলছেন, এই ট্রাম্পই এখন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলে সবচেয়ে এগিয়ে। আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ নাগরিকের সমর্থন আছে তাঁর পেছনে। তাহলে আসলে আমেরিকা কোন অবস্থায় আছে। এক বিচার কী ট্রাম্প বা তাঁর সমর্থকদেরকে থামাতে পারবে? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে আমেরিকান ভোটারদের ঠিক করতে হবে, সংবিধান, আইনের শাসন; না এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোনটা বেছে নেবেন তাঁরা। এর ওপর নির্ভর করছে দেশটির ভবিষ্যৎ।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট