ঘূর্ণিঝড় রিমালে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা।
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তাঃ২৬ মে ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। ছবি : কালবেলা
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র যখন উপকূলে উঠে আসবে তখন জোয়ারের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
রোববার (২৬ মে) সচিবালয়ে রাতে বিশেষ ব্রিফিংয়ে এ শঙ্কার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রিমালের আঘাতে ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা, ভোলা, চরফ্যাশন, কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, রিমালের কেন্দ্র আর দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে স্থলভাগে উঠে আসবে। এ সময় জোয়ারের সম্ভাবনা আছে। তখন উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার শঙ্কা আছে। এছাড়া বর্তমানে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ঘূর্ণিঝড়টি আগাচ্ছে। জোয়ার থাকলে বাতাসের গতিবেগও বাড়তে পারে। এতে উপকূলবাসী আতঙ্কে আছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব শুরু
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র স্থলভাগে উঠে আসার ৫ ঘণ্টার মধ্যে পুরো ঝড় স্থলভাগে উঠে আসবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করছে। কেন্দ্র উঠে আসার পরবর্তী ৩-৫ ঘণ্টার মধ্যে রেমাল বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে। এ সময়টা খুবই শঙ্কার। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় প্রবল বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে ভূমিধস ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ, দুর্ভোগ ও ভোগান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টার পরপরই ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থলভাগে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর কেন্দ্র আগামী দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি উপকূলে প্রবেশ করবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় নেবে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২১.২° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিমি পশ্চিম- দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিমি পশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৫ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালে প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৮-১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-১৩) এ তথ্যানুসারে, ঘূর্ণিঝড়টির আকার ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার হতে পারে। আর ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৮ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসেরও আশঙ্কা রয়েছে।
একইসঙ্গে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত বহাল রয়েছে। ‘রিমাল’-এর অগ্রভাগের প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা বাতাস বইছে, সঙ্গে আছে বৃষ্টি। বাতাসসহ বৃষ্টি হচ্ছে ঢাকায়ও।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।