প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৯, ২০২৫, ৯:০৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৪, ২০২৪, ১২:৫৬ পি.এম
জানেন কি কচুরিপানা দমনে আইন হয়েছিল
- জানেন কি কচুরিপানা দমনে আইন হয়েছিল

- নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তাঃ ৪ মে ২০২৪
গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি জলজ বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ কচুরিপানা ও তার ফুল! এ যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা এক অবহেলিত শোভা। বাংলাদেশে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর বা জলাশয়ে এটি জন্মাতে দেখা যায়। এর ইংরেজি নাম Water hyacinth. বৈজ্ঞানিক নাম Eichhornia crassipes. এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। এক ব্রাজিলিয়ান পর্যটকের মাধ্যমে ১৮ শতাব্দীতে বাংলাদেশে এর আগমন ঘটে।
কয়েক পরই বর্ষাকাল শুরু হবে। খাল, বিল, ঝিল, হাওর-বাঁওড়সহ বিভিন্ন জলাশয় পানিতে ভরে উঠবে। এর মাঝেই গাঢ় সবুজ আবহ নিয়ে ভাসবে কচুরিপানা। তবে বর্ষা নয়, সবসময়ই পানি যেখানে সেখানে কঢ়ুরিপানার দেখা মিলে।
কচুরিপানায় প্রচুর পরিমাণে ফুল ফুটলেও ফল হতে তেমন একটা দেখা যায় না। এটি অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে দ্রুত বংশবিস্তার করে। এর অভিযোজন ক্ষমতা খুব বেশি। প্রতিকূল পরিবেশেও এটি বহু বছর টিকে থাকতে পারে। কচুরিপানার পাতা ডিম্বাকৃতির, চকচকে ও চর্মবৎ। এর বোঁটা স্ফীত ও স্পঞ্জি। ১৫-২০ সে.মি. লম্বা মঞ্জরিতে ৮-১৫টি দৃষ্টিনন্দন ফুল থাকে। প্রতিটি ফুল ৬টি পাপড়ি বিশিষ্ট। সাদা পাপড়িগুলো বেগুনী-নীল ছোপযুক্ত ও মাঝখানে হলুদ রঙের ফোটা থাকে।
২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফোরামের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ফল কাঁঠালের পাশাপাশি কচুরিপানা নিয়েও গবেষণা করতে কৃষি গবেষকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় মন্ত্রী হাস্যরস করে বলেন-‘কচুরিপানা নিয়ে কিছু করা যায় কিনা, কচুরিপানার পাতা খাওয়া যায় না কোনোমতে? গরু তো খায়। গরু খেতে পারলে আমরা খেতে পারব না কেন?’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন-এখন কাঁঠালের আকার অনেক বড়ো হওয়ায় প্রায় ৪০% নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কাঁঠালের আকারটা আরেকটু ছোটো কীভাবে করা যায়, তা গবেষণা করতে পারেন। কাঁঠালের আকার সিভিলাইজড (সভ্য) করেন। জাতীয় ফল কাঁঠালের আকার ছোটো করা গেলে তা বহন সহজ হওয়ার কথাও বলেন মান্নান।
তৎকালীন মন্ত্রী মান্নান গবেষণার কথা বললেও ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গীয় জলাভূমি আইন, মিউনিসিপ্যালিটি আইন, স্থানীয় সরকার আইন ও স্থানীয় গ্রাম সরকার আইন সংশোধন করে কচুরিপানার ধারা যুক্ত করেন। কিন্তু তা তেমন কার্যকর না হওয়ায় কচুরিপানা নিরোধে আলাদা আইনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৩৬ সালে Bengal Water Hyacinth Act, 1936' বা বঙ্গীয় কচুরিপানা আইন নামে সরকার একটি আইন জারি করে। এ আইনে বাড়ির আশেপাশে ও নিজ দখলীকৃত জমিতে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেওয়াকে উৎসাহিত করা হয়। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে কচুরিপানা দমনে আদিষ্ট হন।
তবে বঙ্গীয় কচুরিপানা আইনটি সে সময় সমগ্র পশ্চিম বাংলায় কার্যকর ছিল। বাংলাদেশে এ আইনটি প্রযোজ্য হয়নি।
১৯৩৭ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে কচুরিপানা দমনের অঙ্গীকার করা হয়। নির্বাচনে বিজয় লাভ করে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে কচুরিপানা দমনে অভিযানে নেমেছিলেন।
এটি জঞ্জাল হলেও এর কিছু ভালো দিকও আছে। কচুরিপানা একটি ভালো জৈব সার। বন্যায় স্থলভাগ ডুবে গেলে কচুরিপানা গো-খাদ্যের জোগান দেয়। এছাড়া এটি থেকে দেশের ফরিদপুরে এক ধরনের কাগজ তৈরি করা হয়, যা জাপানে রপ্তানি করা হয়। হাওয়াই ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এঞ্জেলা হোয়াইট তার গবেষণায় কচুরিপানার ডগাকে পুষ্টিকর সবজি উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেন।
শুকনা কচুরিপানা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্ষারধর্মী হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কচুরিপানার ছাই সোডার পরিবর্তে কাপড় কাচায় ব্যবহৃত হতো। তাছাড়া কচুরিপানার ফুল বড়া বানিয়ে খাওয়া যায়। আমাদের দেশে গরমে রেল লাইন বাঁকা হয়ে গেলে কচুরিপানা দিয়ে তা রোধ করার চেষ্টার ছবি ও মিডিয়ায় এসেছে।
Copyright © 2025 আদালত বার্তা. All rights reserved.