পুরান ঢাকার বড় কাটরা
বিশেষ প্রতিবেদন, আদালত বার্তাঃ১১ জুন ২০২৫
পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরলে আজও চোখে পড়ে কিছু প্রাচীন স্থাপত্য, যেগুলো একসময় ছিল বাংলার ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। তেমনি এক নিদর্শন হলো বড় কাটরা। সময়ের ধুলোয় এখন অনেকটাই মলিন হলেও, ইট-পাথরের দেয়াল আজও কথা বলে এক নীরব ইতিহাসের।
ইতিহাস:
১৬৪৪ সালে মুঘল সুবেদার শাহ সুজা এই বড় কাটরা নির্মাণ করেন তার স্ত্রী ও পরিবারের জন্য। শুধু আবাসিক ব্যবস্থাই নয় — এখানে থাকতেন বিদেশি বণিকেরা এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসাফিররাও।
মূলত, এটি ছিল এক ধরনের সরাইখানা বা অতিথিশালা, যেখানে মুসলিম মুসাফিরেরা রাতে বিশ্রাম নিতেন। তখনকার দিনে পথচারীদের থাকার সুব্যবস্থা খুব কমই ছিল, তাই বড় কাটরা ছিল তাদের জন্য এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:
মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বড় কাটরা ছিল দোতলা। এর সামনে ছিল অর্ধগোলাকার ধনুকাকৃতি গেটওয়ে। ভিতরে ছিল উঠান ঘেরা বারান্দা, একাধিক কক্ষ, আর চারপাশে বাগান।
দেয়ালের অলংকরণে ছিল সূক্ষ্ম কারুকাজ, আর ইটের দৃষ্টিনন্দন কাজ। প্রায় ৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ভবন একসময় ছিল পুরান ঢাকার সবচেয়ে বড় সরাইখানা ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
এখানে থাকতেন বণিক, ভিনদেশি অতিথি, আর মুসাফিরেরা। ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী, মুসাফিরদের বিনামূল্যে আশ্রয় দেওয়া হতো।
অবস্থান:
চকবাজার, পুরান ঢাকা।
মুঘল বাংলার বৃহত্তম কাটরা ধাঁচের স্থাপত্য। বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আবাসন এবং মুসাফিরদের সরাইখানা — তিনটির সংমিশ্রণ এক সাথে।
এখনও এর ইট-পাথরের দেয়াল গুলো হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এটি শুধু স্থাপত্য নয় — বরং নীরব দেয়াল আজও গল্প বলে হারিয়ে যাওয়া দিনের…
সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সাথে সাথে সবাইকে সচেতন হতে হবে আর এর রক্ষায় সবাইকে কাজ করতে হবে। আর এর মাধ্যমেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।