1. multicare.net@gmail.com : আদালত বার্তা :
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

ফেলে দেওয়া পাটকাঠি দিয়ে রপ্তানি আয় শত কোটি টাকা!

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

ফেলে দেওয়া পাটকাঠি দিয়ে রপ্তানি আয় শত কোটি টাকা!

এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক আদালত বার্তাঃ২২ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাট দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে অনেকেই জানেন না, শুধু পাট নয়, পাটকাঠি থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। একসময় যেসব পাটকাঠি রান্নার জ্বালানি গরিব মানুষের ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হতো, তা আজ বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবান পণ্য হিসেবে পরিচিত হচ্ছে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন পাটকাঠির ছাই (Jute Stick Charcoal) থেকে Activated Carbon তৈরি করছে, যা পানি ফিল্টার, মেডিকেল, প্রসাধনী ও বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি এখন বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাটকাঠির ছাই কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

পাটকাঠি পোড়ানোর পর যে ছাই পাওয়া যায়, সেটি উচ্চমানের কার্বন সমৃদ্ধ। এই কার্বন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় পরিবেশবান্ধব এবং বেশ কার্যকর। বিশেষ করে, এটি Activated Carbon উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী।

পাটকাঠির ছাইয়ের ব্যবহার:

পাটকাঠির ছাই থেকে তৈরি Activated Carbon বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হয়, যেমন—

✅ পানি পরিশোধন: এটি বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিক শোষণ করে বিশুদ্ধ পানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ ওষুধ শিল্প: বিষনাশক ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ আতশবাজি: উন্নতমানের আতশবাজি তৈরির অন্যতম উপাদান এটি।
✅ ফেসওয়াশ ও প্রসাধনী: Activated Carbon ফেসওয়াশ, স্কিন মাস্ক, দাঁত পরিষ্কারক পাউডারে ব্যবহৃত হয়।
✅ কালি ও পেইন্ট: কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, উচ্চমানের পেইন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ এয়ার ফিল্টার: গাড়ি ও কারখানার বায়ু পরিশোধনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিক বাজার ও রপ্তানি সম্ভাবনা

বর্তমানে চীন, তাইওয়ান, জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, জার্মানি ও ইউরোপে পাটকাঠির ছাই রপ্তানি হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি Activated Carbon-এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বাজার মূল্য ও সম্ভাব্য আয়:

✅ প্রতি মণ পাটকাঠির দাম: ১৮০-৩০০ টাকা
✅ প্রতি মণ পাটকাঠি থেকে ছাই উৎপাদন: ৪-৫ কেজি
✅ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাটকাঠির ছাইয়ের মূল্য: ১০০০-২০০০ ডলার
✅ সম্ভাব্য বার্ষিক রপ্তানি আয়: প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার (আড়াই হাজার কোটি টাকা)

বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদিত হয়। এর ৫০% সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ২.৫ লাখ টন ছাই উৎপাদন সম্ভব, যা রপ্তানি করে বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।

বাংলাদেশে পাটকাঠির ছাই উৎপাদন কারখানা

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬টি কারখানা পাটকাঠির ছাই উৎপাদন করছে, যেমন—

🏭 জিং সিং ট্রেডিং (মধুখালী, ফরিদপুর)
🏭 গোল্ডেন কার্বন ফ্যাক্টরি (বোয়ালমারী, ফরিদপুর)
🏭 দি গোল্ডেন ফাইবার (জামালপুর)
🏭 জামালপুর চারকোল (জামালপুর)
🏭 মিমকো কার্বন (জামালপুর)
🏭 তাজ এগ্রো কার্বন ফ্যাক্টরি (ঝিনাইদহ)

এই কারখানাগুলোতে প্রতিদিন ৪০-৫০০ মণ পাটকাঠির ছাই উৎপাদন হচ্ছে এবং স্থানীয় কৃষকদের কাছে এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

কেন পাটকাঠির ছাই ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন?

✅ বিশ্ববাজারে উচ্চ চাহিদা: প্রতি বছর এর চাহিদা বাড়ছে।
✅ সুলভ কাঁচামাল: বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাটকাঠি পাওয়া যায়।
✅ পরিবেশবান্ধব: সরকারও এই শিল্পকে উৎসাহিত করছে।
✅ উচ্চ মুনাফা: রপ্তানির মাধ্যমে সহজেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
✅ কৃষকদের জন্য নতুন আয়ের উৎস: যারা পাট চাষ করেন, তারা এখন পাটকাঠি বিক্রির মাধ্যমেও লাভবান হতে পারেন।

কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন?

ধাপ ১: কাঁচামাল সংগ্রহ

✅ কৃষকদের কাছ থেকে পাটকাঠি সংগ্রহ করতে হবে।
✅ মৌসুমে সস্তায় কিনে স্টক রাখতে হবে।

ধাপ ২: কারখানা স্থাপন ও প্রযুক্তি ব্যবহার

✅ ছাই উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করতে হবে।
✅ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে Activated Carbon উৎপাদনের দক্ষতা বাড়াতে হবে।

ধাপ ৩: গুণগত মান নিশ্চিত করা

✅ ISO বা অন্যান্য মান নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
✅ আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে হবে।

ধাপ ৪: বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ

✅ Alibaba, Indiamart ও অন্যান্য B2B প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিদেশি ক্রেতা খুঁজতে হবে।
✅ সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

প্রধান চ্যালেঞ্জ:

❌ পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব
❌ রপ্তানি প্রক্রিয়া সম্পর্কে অভিজ্ঞতার ঘাটতি
❌ বাজার সচেতনতার অভাব

সম্ভাব্য সমাধান:

✅ সরকারি সহায়তা: পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার সুবিধা নেওয়া।
✅ প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা বৃদ্ধি: স্থানীয়ভাবে আরও কারখানা স্থাপন করা।
✅ বাজার সম্প্রসারণ: বেশি দেশে রপ্তানির চেষ্টা করা।

পাটকাঠির ছাই বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এটি শুধু কৃষকদের জন্য বাড়তি আয়ের উৎস নয়, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক Activated Carbon বাজারে নেতৃত্বে নিয়ে যেতে পারে।

যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এই ব্যবসায় নামা যায়, তাহলে এটি একটি বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হতে পারে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট