1. multicare.net@gmail.com : আদালত বার্তা :
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

বারোমাসি কাঁঠালের নতুন জাত উদ্ভাবন, দেড় বছরেই ফলন, থাকবে না আঠা।

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

বারোমাসি কাঁঠালের নতুন জাত উদ্ভাবন, দেড় বছরেই ফলন, থাকবে না আঠা।

বিশেষ প্রতিবেদন,আদালত বার্তাঃ৬ জুন ২০২৪।

কাঁঠালের চারা রোপণের মাত্র দেড় বছরেই পাওয়া যাবে ফল। বছরের বারমাসই ধরবে কাঁঠাল। থাকবে না আঠাও। এমন নতুন কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি কাঁঠাল-৬।

গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) একদল ফলবিজ্ঞানী কাঁঠালের নতুন জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। এর আগে তাঁরা কাঁঠালের পাঁচটি জাত উদ্ভাবন করেন। সেগুলো হলো বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২, বারি কাঁঠাল-৩, বারি কাঁঠাল-৪ ও বারি কাঁঠাল-৫।

সম্প্রতি উচ্চফলনশীল বারি কাঁঠাল–৬ জাতটি অবমুক্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড। এই কাঁঠালের আরও বিস্তর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, নতুন জাতটি অন্যান্য বারোমাসি কাঁঠালের তুলনায় দ্রুত ফলন দেবে।

বারির উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের ফল বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানান, আম, লিচু, পেয়ারা, লটকন, মাল্টাসহ জনপ্রিয় অনেক ফলের চারা সহজে কলমপদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। ফলন আসে দু–এক বছরের মধ্যে। ফলের জাত, স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ থাকে অটুট। এসব কারণে চাষিরা দিন দিন ওই সব ফল চাষে ঝুঁকছেন। উল্টো চিত্র কাঁঠালের ক্ষেত্রে। তাই কাঁঠালের কলম ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনে উদ্যোগী হন উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

জাতীয় ফল হলেও কাঁঠাল চাষ প্রসারে এত দিন অন্যতম বাধা ছিল ‘উন্নত চারা’। কারণ, প্রাচীনকাল থেকে কাঁঠালের চাষ হয়ে আসছে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজ থেকে তৈরি চারা দিয়ে। এ পদ্ধতিতে চারা লাগানোর সাত-আট বছর পর গাছে ফলন আসে। তা ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে জাত, স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ কখনো ঠিক থাকে না। এসব কারণে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে ফলচাষিরাও অনাগ্রহী। বারি–৬ জাতের কাঁঠাল এই সমস্যা ঘুচাবে বলে বিশ্বাস উদ্ভাবকদের।

বারি কাঁঠাল-৬-এর উদ্ভাবনে জড়িত বারির ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত আগাম জাতের কাঁঠালের মাতৃজাত সংগ্রহ করে কলম চারা তৈরিতে তাঁরা প্রথম সফল হন ২০০৯ সালে। এতে আশার আলো দেখতে পান তাঁরা। পরে ২০১৮ সালে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উচ্চফলনশীল বারোমাসি কাঁঠালের কলম চারা তৈরিতে শুরু হয় ব্যাপক গবেষণা। সফলতা আসে ২০২১ সালে। ১৫টি চারা প্রদর্শনী মাঠে রোপণ করে মাত্র দেড় বছরে (২০২৩ সালের মে-জুন মাসে) ফলন পাওয়া গেছে ১৩টিতে।

উদ্ভাবিত বারি–৬ কাঁঠালের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে জিল্লুর রহমান বলেন, বারি-৬ জাতের কাঁঠালের গাছ বিস্তৃত ডালপালাবিশিষ্ট সতেজ ও সবুজ। বেশির ভাগ গাছ দেড় বছরের মাথায় ফলন দিতে সক্ষম হলেও দুই বছর পর সব গাছেই ফল আসে। ফলের গড় ওজন ৩ দশমিক ৯৩ কেজি। ফলের ওপরের পৃষ্ঠ দেখতে হলুদাভ সবুজ। পাল্প (শাঁস) শক্ত, উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের ও আঠাবিহীন। এর মিষ্টতা (টিএসএস) ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গড় ফলন হেক্টরে ১০ দশমিক ৬ টন। চারা রোপণের অল্প সময়ে ফলন আসায় জাতটি কাঁঠাল চাষে বিপ্লব বয়ে আনবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে বিভিন্ন জাতের কাঁঠালগাছ রয়েছে। সব গাছের ফলন দেখা যায়নি। ওই গবেষণা মাঠে থাকা ১৫টি গাছ রয়েছে, যেগুলো বারি-৬ জাতের। এর মধ্যে ১৩টিতে কাঁঠাল ঝুলছে। কাঁঠালগুলো মাজারি আকারের। একেকটি গাছে ১০ থেকে ১৩টি কাঁঠাল হওয়ায় বেশ কয়েকটি গাছ হেলে পড়েছে। হেলে যাওয়া গাছগুলো সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখতে দেওয়া হয়েছে বাঁশ দিয়ে সাপোর্ট।

জাতীয় ফল কাঁঠালের অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরলেন বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার। তিনি জানান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এ বছর ‘এক দেশ, এক অগ্রাধিকার’ পণ্য হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কাঁঠালকে বাছাই করেছে। কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফল। দেশে প্রায় ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়। কাঁঠাল থেকে বছরে আয় হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কাঁঠাল থেকে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনের প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা।

নতুন উদ্ভাবিত কাঁঠাল নিয়ে বারির মহাপরিচালক বলেন, কাঁঠালের নতুন জাতটি রোপণ করে মাঠপর্যায়ে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। নতুন জাতের কাঁঠাল খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি এবং ঘ্রাণ ভালো।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট