সুপ্রিম কোর্ট বারে সুষ্ঠ ভোটের লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ ।
এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক আদালত বার্তাঃ ০৬ মার্চ ২০২৪
সুপ্রিম কোর্ট বারে সুষ্ঠ ভোটের লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ
সুপ্রিম কোর্ট বারে সুষ্ঠ ভোট চায় সব পক্ষই
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আইনজীবীদের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের ভোট নিয়ে কখনোই অভিযোগ, অনুযোগ কারচুপি হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বিগত দুই বারের নির্বাচনে পূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে হামলা মামলাসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। এতে করে দেশ বিদেশে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সব কিছুকে পিছে ফেলে ও অতীতের ভুলভ্রান্তি শোধরানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন এবারের ভোট হবে সুষ্ঠু ও সুন্দর। তবে এমন কথার বাস্তবায়ন দেখা যাবে ৬ ও ৭ মার্চ।
আজ বুধবার শুরু হবে এবারের ভোটগ্রহণ। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। ৭ মার্চ বৃহস্পতিবারও একইভাবে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে শেষ হবে নির্বাচন। এরপর ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন।
ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন উপ-কমিটি ইতোমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ৫০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৭ হাজার ৮৮৮ জন। এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) মধ্যে।
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুজন সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুজন সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল।
সুষ্ঠু নির্বাচন হবে আশা প্রকাশ করে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, গতবার যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে, আমরা আশা করি এবার তা ঘটবে না। আইনজীবীরা নিজেরাই এবার পাহারা দেবেন। আর নির্বাচন কমিশন বলেছেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। বর্তমান কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকও বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি সতর্কতার সাথে আস্থা রাখতে চাই। এখন পর্যন্ত আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সবাইকে অনুরোধ করছি যে আপনারা ভোট দিতে আসুন।
অন্যদিকে সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবু সাঈদ সাগর বলেন, আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে এবারের ভোট সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্ট বার, বার কাউন্সিল ও ঢাকা বারে ছয়টি নির্বাচন করেছি। সব নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলিল ভোটে বৈধভাবে হয়েছে। অন্যায় বা জোরপূর্বক কোনো নির্বাচন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি যেহেতু প্রার্থী আছি। কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বা কোনো দল কোনোভাবে এই নির্বাচনকে ব্যাহত করার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ তো করবেই না। বিএনপিও করতে সক্ষম হবে না। চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি। ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে বলে আমি মনেকরি।
‘আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আমি যতটুকু আইনজীবীদের স্বার্থে কাজ করেছি। সে হিসেবে আমি মনে করি আমাকে তাদের ভোট দেওয়া উচিৎ,’ বলেন তিনি।
এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং এম কে রহমানের প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া প্রার্থী হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।
জানতে চাইলে নাহিদ সুলতানা যূথী ঢাকা মেইলকে বলেন, আইনজীবীদের সংগঠন এটি। এখানে পাস ফেল করলে সরকারের কিছু আসে যায় না। এটি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। এখানে যে দলের লোকই পাস করুক না কেন, সরকারের কোনো ক্ষতি নেই। বরং ভোটটা সুষ্ঠু হলে সরকারেরই সুনাম হবে।
অপরদিকে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের বলেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই। আমরা প্রত্যাশা করছি সুন্দর নির্বাচন হবে। এজন্য আইনজীবীসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ৬ ও ৭ মার্চ একটি ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। নির্বাচনের পুরো পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য। এজন্য আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করেছি।
২০২৪-২৫ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল। তফসিলে ৬ ও ৭ মার্চ ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি, সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদ রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ সেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তারা জোর করে পুলিশ ডেকে এনে নির্বাচনে পাস করেছে। আর এ নিয়ে সারা বছর আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে আসছে সরকার বিরোধী আইনজীবীরা।