সরকারি আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা বিধানে হচ্ছে নতুন আইন।
ডেস্ক নিউজ আদালত বার্তা :১ মে ২০২৩।
সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে আনা, নিরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সমকালীন বিশ্বের নিরীক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারগুলো দেশের বিদ্যমান নিরীক্ষা (অডিট) ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সনতুন আইন হচ্ছে। সরকারি কোষাগার থেকে পরিশোধিত সব অর্থের নিরীক্ষা করার বিধান রেখে ‘পাবলিক অডিট বিল ২০২৩’-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার।
এই আইনে সরকারের সব রাজস্ব, প্রাপ্তি, ব্যয় ও পরিশোধ এবং সব সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব থেকে পরিশোধিত সব অর্থের নিরীক্ষা করা হবে। ইতোমধ্যে বিলের খসড়ার ওপর মতামত চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। আগামী ৭ মের মধ্যে ই-মেইলে কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে মতামত পাঠানো যাবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
খসড়া আইন অনুযায়ী, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও তার দপ্তর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালন করবেন। তিনি সরকারি হিসাবগুলোতে প্রাপ্য সব রাজস্ব ও প্রাপ্তি নিরীক্ষা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে যেসব রাজস্ব সংযুক্ত তহবিলে প্রাপ্য তা যথাযথ এবং সঠিকভাবে জমা ও হিসাবভুক্ত হয়েছে কিনা এবং রাজস্ব সম্পর্কিত আইন, বিধি ও পদ্ধতিগুলো পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালিত হয়েছে কিনা, তা খাতিয়ে দেখবেন মহাহিসাব নিরীক্ষক। তিনি সরকারের রাজস্ব তথাÑ কর ও কর ব্যতীত রাজস্ব ইত্যাদি যথাযথভাবে নিরূপণ ও আদায় নিশ্চিতকল্পে পর্যাপ্ত পদ্ধতি ও ব্যবস্থা রয়েছে কিনা এবং প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবের প্রাপ্তিগুলো প্রযোজ্য আইন, বিধি ও পদ্ধতি অনুযায়ী যথাযথ এবং সঠিকভাবে জমা ও হিসাবভুক্ত হয়েছে কিনা তা যাচাই করবেন। এছাড়া মহাহিসাব নিরীক্ষক এসব বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য যেসব রেকর্ড ও হিসাব পরীক্ষা করা উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, তিনি তা পরীক্ষা করবেন।
অন্যদিকে মহাহিসাব নিরীক্ষক সরকারি অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন, বিধি, বিধানাবলি প্রতিপালন করে যে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যে মিতব্যয়িতার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করে হিসাবভুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে সংযুক্ত তহবিল থেকে ব্যয়িত সব অর্থের অডিট করবেন। আইন অনুযায়ী মহাহিসাব নিরীক্ষক সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, বাণিজ্য ও লাভ-ক্ষতি হিসাব এবং ব্যালেন্স শিটসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে রক্ষিত সব হিসাব অডিট করবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, মহাহিসাব নিরীক্ষক ‘বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব আইন ২০১৫’-এর আওতায় অংশীদারত্ব চুক্তি বা পিপিপি চুক্তি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব ব্যবস্থা, বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে গৃহীত প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য অর্জন সংক্রান্ত বিষয় অডিট করতে পারবেন।
আইনের খসড়া অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় প্রদত্ত সরকারি অর্থের বিষয়েও অডিট করা যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কোনো অর্থবছরে সংযুক্ত তহবিল থেকে কোনো ঋণ বা সাহায্য মঞ্জুরি প্রদান করা হলে, ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ব্যয় ও প্রাপ্তির হিসাব অডিট করা যাবে।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, এনজিও, ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট, চ্যারিটি এবং সুশীল সমাজ সংগঠন বা অন্য কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা, যার সঙ্গে সরকারের সরাসরি কোনো স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা নেই, সেরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত তহবিল থেকে কোনো অর্থ, তহবিল, অনুদান কিংবা ভর্তুকি প্রদান করা হলে, ওই ব্যয়ের যথার্থতা সম্পর্কে অনুসন্ধান, পরীক্ষা ও যাচাই করা যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান, পরীক্ষা ও যাচাই সংযুক্ত তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এছাড়া কোনো শর্তসাপেক্ষে অনুদান বা ঋণ প্রদান করা হলে, সে শর্ত সন্তোষজনকভাবে প্রতিপালিত হয়েছে কিনা তা যাচাই করা যাবে।