এক দফার আন্দোলন: রয়েসয়ে এগোনোর কৌশলে বিএনপি
নিউজ ডেস্ক আদালত : ০৪ আগস্ট ২০২৩,
এক দফার আন্দোলন: রয়েসয়ে এগোনোর কৌশলে বিএনপি
এক দফার চলমান আন্দোলনে আপাতত কঠোর কোনো কর্মসূচি না দিয়ে রয়েসয়ে এগোতে চায় বিএনপি। ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করতে এবং অসময়ে অযথা শক্তি ক্ষয় না করার কৌশল থেকেই এমন পরিকল্পনা করেছেন বলে দলটির নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন। একই দাবিতে আন্দোলনরত সমমনা জোট ও দলগুলোও ভাবনাচিন্তা করে কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, এ পর্যন্ত এক দফা দাবিতে যেসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তার সবই ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে গত ২৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে মারমুখী আচরণে স্পষ্ট হয়েছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ওই কর্মসূচি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী আপাতত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবি অর্জিত না হয়।’
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবি আদায়ে ১২ জুলাই আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এই দাবিতে ইতিমধ্যে পদযাত্রা, মহাসমাবেশ ও সবশেষ ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। বিভিন্ন মহল মনে করছে, অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষ চলমান আন্দোলনকে খানিকটা চাপে ফেলেছে। খোদ বিএনপির মধ্যেও ওই কর্মসূচি নিয়ে নানা আলাপ আছে। শরিকদেরও অনুযোগ আছে কর্মসূচির সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচির ক্ষেত্রে সতর্ক হয়েছে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, অনেকে বলছেন, আর সময় নেই, যা করার এখনই করতে হবে। তবে তাঁরা মনে করছেন, এখনো যথেষ্ট সময় আছে। আর প্রতিদিন তো কর্মসূচি দেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করাও সম্ভব নয়। এ জন্য তাঁরা ধীরে ধীরে এগোবেন, আপাতত এটাই তাঁদের পরিকল্পনা। অবশ্য তিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বদল হতে পারে বলেও আভাস দেন। তিনি বলেন, কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিকল্প নেই, এমন কোনো পরিস্থিতি সামনে এলে ওই পরিস্থিতির আলোকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত বুধবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক দফার আন্দোলনের খুঁটিনাটি নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পর্যালোচনা সভা করেন বিএনপির নেতারা। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন।
সূত্র জানায়, সভায় এক দফার আন্দোলনকে বেগবান করতে জনগণকে সম্পৃক্ত করায় জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়। পেশাজীবীদের সংগঠনগুলোকেও এই আন্দোলনে নামানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সভায় কর্মসূচি পালনে বিগত দিনের ভুলত্রুটি তুলে ধরেন কেউ কেউ। বিএনপির পক্ষ থেকে সমমনাদের পরামর্শ চাওয়া হয়। আগামী দিনে কর্মসূচির ধরন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শও আসে। শরিকেরা আরও কিছুদিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের প্রস্তাব দেয়। সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ারও প্রস্তাব আসে। তবে এমন কর্মসূচি রয়েসয়ে ঘোষণার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে আগস্টে শোকের মাসের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় অংশ নেওয়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর একাধিক নেতা জানান, বুধবার রাতের সভায় ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি নিয়ে সমমনা দলগুলোর নেতারা প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা বলেছেন, খুব কম সময়ে এত বড় একটি কর্মসূচির জন্য যে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা দরকার, তা ছিল না। এ কারণে ওই কর্মসূচি থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি আসেনি। এ জন্য ভবিষ্যতে কর্মসূচি ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নে আরও সতর্ক হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় সভায়। শরিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে আলাপ না করে এবং আগেভাগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এতে কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। এখন থেকে যেকোনো কর্মসূচি ঘোষণার অন্তত এক দিন আগে তা জানানোর দাবি করে শরিকেরা।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সভায় তারা (বিএনপি) আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছে। আমরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছি। এসব পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে আমরা যে যার জায়গা থেকে আলোচনা করব। কীভাবে সফলতা আসবে, সে লক্ষ্যে কর্মসূচি ঠিক করব।’
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একটি জোটের নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিগগির এক দফার পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার পর এ বিষয়ে যৌথ আলোচনায় সিদ্ধান্ত হবে।
এক দফার আন্দোলনের শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘২৯ জুলাই আমাদের ড্রেস রিহার্সাল ছিল। আমরা দেখতে চেয়েছি, সরকার কীভাবে তা মোকাবিলা করে এবং আমাদের শক্তি কতখানি। ভবিষ্যতে আরও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাব এবং ধাপে ধাপে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাব।’