প্রথম রাউন্ডেই হেভিওয়েটদের হোঁচট
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা : ২৪ নভেম্বর২০২৩
দেশের সবচেয়ে উত্তরের দুটি বিভাগ রংপুর ও রাজশাহীর সংসদীয় আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কারা হচ্ছেন তা চূড়ান্ত করেছে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের (্এমপি) মধ্যে কারা বাদ পড়ছেন তাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে দুই বিভাগের ৭২টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নানা কারণে দুই বিভাগের কমবেশি ২০টি আসনে বর্তমান এমপিদের বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই তালিকায় বড়, ছোট ও পরিচিত অনেক মুখও রয়েছেন।
মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, প্রার্থী বদলানোর কথা এতদিন মুখে মুখে থাকলেও মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম বৈঠকে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে ব্যক্তিগত নানা অভিযোগে অভিযুক্ত, কিন্তু বিজয় সুনিশ্চিত জেনে বিশেষ বিবেচনায় ক্ষমা করা হয়েছে, এমন দুই সংসদ সদস্য আবার দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন।
অবশ্য, চূড়ান্ত খবর পেতে সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে।
দুই বিভাগের মধ্যে রংপুরের ৮ জেলায় ৩৩ এবং রাজশাহীর সমসংখ্যক জেলায় ৩৯টি আসন রয়েছে। অবশ্য দুই বিভাগের ৭২টি আসনের মধ্যে বর্তমান সংসদে ১৩টি আসনে জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্বতন্ত্র একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ ১৩টি আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রথম বৈঠক করেছে। এদিন রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও দুই বিভাগের প্রার্থী বাছাই শেষ হয়েছে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বোর্ড ও দলের প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মনোনয়ন বোর্ডে তার সঙ্গে আরও ১১ জন সদস্য রয়েছেন।
এরপর পর্যায়ক্রমে বরিশাল, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য বলেন, অরাজনৈতিক আচরণ, দলের নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলা, এলাকায় কম যাতায়াত করা, দলকে দুর্বল করার জন্য দায়ী সংসদ সদস্যরা বাদের তালিকায় রয়েছেন।
মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, সারা দেশে কিছু পরিচিত মুখও রয়েছেন বাদের এই তালিকায়। তিনি বলেন, তার জানামতে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে কমবেশি ২০ আসনে পরিবর্তন আসছে। তবে আরও তিনটি আসন আলাদা করে রেখেছেন বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা। সে তিনটিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ, ঘোষণা হওয়ার পরও অতীতে প্রার্থী বদলানোর নজির আছে। আবার বাদ দেওয়া প্রার্থীকে মনোনয়ন ফিরিয়ে দেওয়ার নজিরও আছে।
দুই বিভাগের যে জেলাগুলোর আসনে পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে, সেগুলো হলো পঞ্চগড়ে দুটি আসনের মধ্যে একটি, ঠাকুরগাঁওয়ে ও দিনাজপুর জেলায় দুটি, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও গাইবান্ধা জেলায় একটি করে আসনে নতুন প্রার্থী আসতে পারেন। নওগাঁ ও পাবনা জেলায় দুটি করে এবং জয়পুরহাট ও নাটোরে একটি করে আসনে নতুন মুখ আসছেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের কয়েক সদস্য বলেন, এ সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে, কমতেও পারে। মনোনয়নে বিভিন্ন ‘প্রেশার গ্রুপ’ কাজ করে।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী বদলানোর বিষয়ে বোর্ডের এক সদস্য আপত্তি জানালে বোর্ড সভাপতি তাকে কড়া ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন।
মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে প্রার্থী বদলের ইঙ্গিত দেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের মনোনয়ন বোর্ডে যে সিদ্ধান্ত হয়েছেসেখানে বর্তমান কয়েকজন বাদ পড়েছেন, এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। তবে বাদ পড়েছেন। কারণ, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, আগামী ২৫ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান। জোট হবে বিভিন্নভাবে, কার সঙ্গে কার জোট হবে কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল। জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় আছে। কাজেই তালিকাও আসতে পারে। এমনও হতে পারে আপনিও ভাবছেন না, আমিও ভাবছি না। কিন্তু জোট হয়ে গেল।’
মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শুধু অজনপ্রিয়রা বাদ পড়েছেন ব্যাপারটি পুরোপুরি তেমন নয়। অসুস্থ সংসদ সদস্য, বয়স যাদের আশি ছুঁই ছুঁই, অথবা আশি পার করেছেন। তারাও বাদ পড়েছেন। অন্য আসনগুলোতেও এই বিবেচনায় বাদ পড়বেন বর্তমান এমপিদের মধ্যে আরও কয়েকজন। কারণ, গত সংসদে বহু আসনে সংসদ সদস্যরা মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে উপনির্বাচন ঝামেলা অনেক বেশি পোহাতে হয়েছে সরকারকে। আগামী সংসদে উপনির্বাচন এড়াতে প্রবীণ ও অসুস্থ প্রার্থী মনোনয়নে বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। এবার ফরমের দাম নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে। চারদিনে আওয়ামী লীগের ফরম নিয়েছেন ৩ হাজার ৩৬২ জন। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, আমলা, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, অভিনেত্রী, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও আইনজীবী রয়েছেন।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর।