সেপ্টেম্বর ঘিরে আসছে নানা কর্মসূচি
উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফের উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি। এরই মধ্যে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাদের বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যে এই উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আরও জোরালো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগে এসে এ দুই দলের কথার লড়াই মাঠে গড়াতে পারে। শুধু এই দুটি দল নয়, এ সময় শক্তি দেখাতে মাঠে নামবে বাম দল, ইসলামি দল এবং অন্য ছোট রাজনৈতিক দলগুলো।
জানা গেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে দাবি আদায়ে এবং তৃণমূল স্তরের সমর্থন জোগাতে দেশব্যাপী সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো।
সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নানা তৎপরতার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ সময় রাজপথে সক্রিয় থাকবে। দলটি এই প্রক্রিয়াকে জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া বলছে। দলটি বলছে, তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসজুড়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করবে। এ জন্য আসনওয়ারী সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এবং সব পর্যায়ের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে বলেছেন। সরকারের পক্ষে প্রচার চালাতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, গত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের তিনটা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা এবং নিদেজের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলো দূর করা। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসজুড়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করবে। এ জন্য আসনওয়ারী সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দলটির বিভিন্ন দাবি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে রাজনীতির মাঠ। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এসে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং তাদের সমমনা দলগুলো রাজপথে নামার প্রস্তুতি নেবে। বিএনপি ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অংশ হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। একই সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করবেন ৮টি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
দলীয় তথ্য মতে, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সরকারবিরোধী সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৯ সংগঠন এ নিয়ে বৈঠকও করেছে। প্রাথমিকভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যসহ কয়েকটি নাম প্রস্তাব এসেছে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনগুলোর। সমমনা ছাত্র সংগঠনের বাইরে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছে ছাত্রদল।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ উত্তপ্তের মধ্যে সরকারি দলও নানা কর্মসূচি নিয়ে এ সময় মাঠে থাকার পরিকল্পনা করছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে নানা ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। তারা বলছেন, মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারের অংশ হিসেবে সারা দেশে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবেন। বিরোধী দলগুলো যেন কোনো অনাকাঙ্কিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। সেদিকে নজর রেখে ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় থাকবেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারকে এ সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী ও পক্ষের রাজনৈতিক আন্দোলনও মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত বা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন বেগবান হতে পারে। তা ছাড়া মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মোকাবিলা করতে হতে পারে। ফলে রাজনীতির মাঠ বিরোধী দল যেমন দখলে রাখার চেষ্টা করবে, তেমনি সরকারকে চাপমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাইবেন রাজনীতির মাঠ তাদের অনুকূলেই যেন থাকে।\
নির্বাচনি যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং তাদের সমমনা দলগুলোও রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া দেশব্যাপী সমাবেশ করবে রাজনৈতিক দলগুলো।
চলতি সেপ্টেম্বরে উত্তপ্ত হতে পারে রাজনীতির মাঠ এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে দাবি তুলেছে, তা সবার কাছেই যৌক্তিক প্রমাণ হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবিতে বিএনপির সোচ্চার আছে, সামনেও থাকবে। এর সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আছে। তিনি বলেন, বিএনপি তো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাচ্ছে। সেটা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।
প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সামনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন মাঠেই থাকবেন। সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো মাঠে নামলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ ঘরে বসে থাকবে না। বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, বিরোধী পক্ষ রাজনীতির মধ্যে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে আওয়ামী লীগ কোনো বাধা দেবে না। তবে খারাপ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে তখন যেভাবে প্রয়োজন; সেভাবেই তা মোকাবিলা করা হবে।