কর্মক্ষেত্র হোক পবিত্র অঙ্গন বিদায়টা হোক সম্মানের।
বিশেষ প্রতিবেদন,আদালত বার্তাঃ২৫ জুন ২০২৫
এটাই সেই বাংলাদেশ, যেখানে ধর্ম বা পেশাগত পরিচয় মুখ্য নয়, ‘মানুষ’, ‘নিবেদিত কর্মী’ পরিচয়ই যথেষ্ট। শুধু এইটুকুর জন্যই তাকে সম্মান করা যায়।
ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ মানবিক বাংলাদেশের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এই স্কুলের একজন ক্লিনার, বাবু সন্তোষ লাল প্রায় ৩৫ বছর ধরে সেখানে কাজ করেন। ১৯৭৩ সালে সন্তোষ লালের মা সুন্দরী রাণী স্কুলের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিয়ের পর তার স্বামী, মানে সন্তোষ লালের বাবা কানু লালও এই স্কুলের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নেন। এরপর স্কুলের পরিচ্ছন্নকর্মীর দায়িত্ব নেন সন্তোষ লাল। বিয়ের পর তার স্ত্রী সনজু রাণীও এখানে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
প্রায় ৩৫ বছর কাজ করে অবসরে যাওয়ার সময় হয় সন্তোষ লালের। শরীরও আর সায় দিচ্ছিলো না। ভেবেছিলেন নিরবে নিভৃতেই চলে যাবেন। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার! এক সকালে শুনতে পেলেন তার অবসর উপলক্ষে স্কুল তাকে একটা বিদায় সংবর্ধনা দেবে। গিয়ে দেখেন, রীতিমতো হল সাজিয়ে, চেয়ার পেতে, ব্যানার টাঙিয়ে ঘটা করে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে! পুরো স্কুলে সাজ সাজ রব। ছেলে-মেয়েরা তার জন্য ছোটাছুটি করছে। শিক্ষকরাও ভীষণ ব্যস্ত অনুষ্ঠান নিয়ে।
সন্তোষ জানতে পারেন স্কুলের বর্তমান আর সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা চাঁদা তুলে এই আয়োজন করেছে। সেকি আয়োজন! বক্তৃতা, ব্যান্ড বাদ্য, স্কাউটদের গার্ড অব অনারের মধ্যদিয়ে সন্তোষ লালের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হলো। অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষক, পুরানো ছাত্র-ছাত্রীরা হাজির হয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন সন্তোষ লালকে। আর কত কত উপহার! আসবাবপত্র, দৈনন্দিন কাজে লাগে এমন সব জিনিস। সেই সাথে ৪ লাখ টাকা, যাতে তার অবসর জীবনটা একটু হলেও নির্ভার কাটে। বিদায় সংবর্ধনা শেষে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সন্তোষ লালকে।
রাশেদ মাহমুদ, ফেনী তার ফেইসবুকে পোস্ট করা পোস্ট হতে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে এই প্রতিবেদন।
আমরা তো এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কোথাও কোনো বৈষম্য থাকবে না, যে যার কাজের কারণে সম্মানিত হবেন।এই চিন্তা চেতনা এবং বাস্তবায়নে থাকতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।