এখন আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে একটু ফ্রিলি মুভ করতে পারবো। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের’– আবদুল হামিদ।
ডেস্ক নিউজ আদালত বার্তা :২৪ এপ্রিল ২০২৩।
টানা দুই মেয়াদে ১০ বছরের বেশি সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিলেন মো. আবদুল হামিদ। তার বিদায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এখন আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে একটু ফ্রিলি মুভ করতে পারবো। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের।’
আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘আমি সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি, সুতরাং মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না এবং কোনো দিন থাকবেও না। আর সকল রাজনীতিবিদকে আমি এ কথাই বলবো, এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে তারা যেন রাজনীতি করেন। তাহলেই রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে। আর এইটা দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে একই প্রত্যাশা।’
বঙ্গভবনে সোমবার সকাল ১১টায় শপথ নেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ওই অনুষ্ঠান শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. আবদুর হামিদ বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতি যেন সাংবিধানিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন এটাই আমার এবং জাতির প্রত্যাশা।’
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের বিষয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই উপমহাদেশে আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি দিন দায়িত্ব পালন করেছি। কেননা ১০ বছর ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও ৪১ দিন বেশি দায়িত্ব পালন করেছি। এর আগে ভারত বা পাকিস্তানেও কেউ এত দিন দায়িত্ব পালন করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি স্পিকার ছিলাম, এখানে আসার আমার ইচ্ছা ছিল না, তবুও চলে এসেছি। জাতীয় সংসদে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। কারণ সেখানে নিজেকে মুক্ত বলে মনে হতো। আমি জানি যে এখানে এলে অনেকটা বেড়াজালের মধ্যে পড়ে যাবো। যাই হোক তবুও মোটামুটি ১০ বছরের বেশি পার করে ফেলেছি।’
পরবর্তী জীবনে কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি তো এখন রিটায়ার্ড। বাড়িতে বসে হয়তো কিছু লেখালিখি করব। তবে অ্যাকটিভ্লি রাজনীতি করার পরিকল্পনা আমার নেই। কারণ দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়েছে, এই দেশে দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করেছে। সুতরাং আবার আমি রাজনীতি করবো বা অন্য কোনো পদে যাবো এটা হবে না। এইটা করলে মনে হবে আমি দেশের মানুষকে হেয় করবো।’
আজ এক বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে বঙ্গভবন থেকে আবদুল হামিদকে বিদায় জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।
এ সময় বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঙ্গভবন গেটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। মাঝখান দিয়ে খোলা জিপে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
মো. আবদুল হামিদ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
এর আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন।
পরে আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।