আজ ১৪ ডিসেম্বর।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
আজকের এই দিনে আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির সেই
শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত—অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ অনেককে। একই সঙ্গে সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রত্যেক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি, যাঁরা দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে হারানোর বেদনা ও কষ্ট।
স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষ দিকে এসে পরাজয়ের আগমুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে মেধা শূন্য করার জন্য পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তখন তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল। জাতির বিবেক অগ্রণী শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের।
এসব হত্যার কারণটি স্পষ্ট, পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করে দিতে।
বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পিত ঘটনার সঙ্গে এ দেশেরই কিছু মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী শক্তি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতার কারণেই এতটা ব্যাপক ও পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই বাহিনীগুলোর সদস্যরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের উঠিয়ে এনেছেন; তুলে দিয়েছেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেরাই হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করেছেন। আমাদের
জন্য এটা গ্লানি আর দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সেই বিশ্বাসঘাতকদের অনেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ও সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছেন, কেউ কেউ মন্ত্রীও হয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন পরে হলেও একাত্তরে যাঁরা হত্যাযজ্ঞ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচার-প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রায় ঘোষিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কবি মেহেরুননিসা ও সাংবাদিক আবু তালেব হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আরও বেশ কিছু মামলায় অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করলেও আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম অপরাধ। এসব হত্যাযজ্ঞে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি। সব ঘাতকের বিচারের মাধ্যমেই জাতি দায়মুক্ত হতে পারে।এখন যাদের বিচার হয়নি দ্রুত বিচার সম্পুর্ন করে রায় কার্যকর করার জন্য দাবী করছি।বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫১ বছর হলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে আজও শহীদের তালিকা করা হয়নি এবং শহিদ পরিবারেররা ষ্ট্রীয় ভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি সময় এসেছে আজ তাদের রাষ্ট্রীয় ভাবে মুল্যায়ন করার।
যাদের আত্মত্যাদের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীন দেশ তাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।