যৌতুক ও শিশুর অভিভাবকত্বসহ ৮ আইনে সরাসরি মামলা নেবে না আদালত
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তাঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সিলেট, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জ জেলায় পারিবারিক আদালত আইন, যৌতুক নিরোধ আইনসহ আটটি আইনের অধীনে আদালতে সরাসরি মামলা করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হওয়া নতুন বিধান অনুযায়ী, এসব মামলার আগে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সরকার আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ (২০২৫ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) এর ধারা ১ এর উপধারা (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ হতে:
ক) ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সিলেট, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জ এই ১২টি জেলায় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ (২০০০ সালের ৬ নং আইন) এর ২১খ ধারার বাধ্যতামূলক মামলা পূর্ব মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার উদ্যোগ সংক্রান্ত বিধান কার্যকরের দিন ধার্য করেছে।
সংশোধিত আইনের তফসিল অনুযায়ী নিচের আটটি আইনের অধীনে উদ্ভূত বিরোধ বা অভিযোগ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়েরের পূর্বে আবশ্যিকভাবে লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১। পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ এর ধারা ৫-তে উল্লিখিত বিষয়; ২। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১-তে উল্লিখিত বিরোধ; ৩। সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বণ্টন সম্পর্কিত বিরোধ; 8) State Acquisition & Tenancy Act, 1950 এর section 96 এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ; ৫) Non-Agricultural Tenancy Act, 1949 এর section 24 এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ; ৬) পিতামাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ এর ধারা ৮ অনুসারে পিতা-মাতার ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিরোধ; ৭) যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩ ও ৪ এ বর্ণিত যৌতুক সম্পর্কিত অভিযোগ; ৮) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ১১(গ)তে বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগ।
খ) আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৬ নং আইন) এর ২১ (গ) ধারা বাংলাদেশের সব জেলায় কার্যকর হবে; এই ধারার বিধানমতে চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার (বিচারক) কর্তৃক প্রত্যায়িত প্রতিটি মধ্যস্থতা চুক্তি চূড়ান্ত, বলবৎযোগ্য এবং পক্ষগণের ওপর বাধ্যকর ও আদালতের ডিক্রি অথবা ক্ষেত্রমত, চূড়ান্ত আদেশ হিসেবে গণ্য হবে।
এর আগে ১ জুলাই নয়টি আইন ও সংশ্লিষ্ট ধারায় বিচারের জন্য লিগ্যাল এইডের মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক রেখে গেজেট জারি করেছে সরকার। আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে শিরোনামে এই গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
তবে, আজ থেকে দেশের ১২টি জেলায় এই আইন কার্যকর হবে বলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গত ১ জুলাই সরকারের জারি করা গেজেটে নয়টি আইনের কথা উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে Negotiable Instruments Act, 1881 এর section 138 এ বর্ণিত চেক ডিসঅনার সম্পর্কিত অভিযোগ (অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা মূল্যমান চেকের ক্ষেত্রে) সংক্রান্ত আইনটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে গতকাল (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটের গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, আমরা যে পরিবর্তন করেছি, পরবর্তী সরকার যদি তা ধরে রাখে তাহলে দেশে ন্যায়বিচার আরও প্রসারিত হবে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের আইনগত প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ বহুগুণে বাড়বে। আমরা সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করেছি, যাতে সিভিল আদালতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হয়। বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষমতা রাজনৈতিক মন্ত্রীদের কাছ থেকে নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া হয়েছে।
মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমত মামলা দায়েরের আগে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট কিছু আইনকে মধ্যস্থতার আওতায় আনা হয়েছে। তৃতীয়ত, লিগ্যাল এইডে এখন দায়িত্বে থাকবেন সিনিয়র যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ