তফসিল ঠেকাতে নামছে বিএনপি
নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা : ১৮ অক্টোবর ২০২৩
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে আজ বুধবার রাজধানীতে জনসমাবেশ করবে বিএনপি। এই সমাবেশ থেকে দুর্গাপূজার পরে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। ২৮ অক্টোবর হতে পারে সেই মহাসমাবেশ। এর মধ্যে এক দফা আদায়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে রাজপথে নামবে দলটি।বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দুর্গাপূজার পরে নতুন যে কর্মসূচি শুরু হবে, তার মূল লক্ষ্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঠেকানো। এ জন্য তফসিল ঘোষণার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। নেতারা মনে করছেন, কঠোর কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে পারলে তফসিল ঘোষণা করা সহজ হবে না। তবে এরপরও তফসিল ঘোষিত হয়ে গেলে নির্বাচন ঠেকাতে রাজপথে লাগাতার কর্মসূচিতে যাবেন তাঁরা।
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার পতনের আন্দোলনের সফল পরিণতি দরকার। সে জন্য কঠোর কর্মসূচির বিকল্প নেই। কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকার পতনের আন্দোলন সফলতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আজ বুধবার বেলা ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণফোরাম ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এক দফার আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এ ছাড়া রাজধানীতে গতকাল এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সবকিছুরই একটা শেষ আছে। এই সরকারেরও শেষ আছে। এই বছরের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন সূর্য উঠবে বাংলাদেশে। নতুন পরিবর্তনের দিকে দেশ ধাবমান হচ্ছে।
যুগপৎ আন্দোলনের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। সরকারকে আঘাত করতে পারে, এমন শক্ত কর্মসূচির কথাই আমরা ভাবছি। ঘেরাও, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের প্রস্তাব আছে। তবে চূড়ান্ত করতে এখনো আলোচনার সুযোগ আছে।’
এর আগে গত সোমবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তফসিলের আগেই কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে মত দেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ইতিমধ্যে শরিকদের কাছ থেকে আসা কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাবগুলোও তুলে ধরা হয় বৈঠকে। সবকিছু সমন্বয় করে রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচির মধ্যে নগরের গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী পদযাত্রা-ঘেরাও, অবস্থান, অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে কথা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে আজকের জনসমাবেশ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে কি না তা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পক্ষে ও বিপক্ষে মত আসে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ আজকের জনসমাবেশ থেকে আল্টিমেটাম না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, আল্টিমেটাম দিলে এই ছুতোয় পূজার ছুটিতেও নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হতে পারে। তবে পূজার পরে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া যেতে পারে, এ ব্যাপারে বৈঠকে কোনো সদস্য দ্বিমত করেননি। আজকের সমাবেশে কার্যকর আল্টিমেটাম না দেওয়া হলেও আল্টিমেটামের মতো করে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানানোর বিষয়ে মত দেন সবাই।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে ঢাকাকেন্দ্রিক এবং ঢাকামুখী কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে প্রয়োজনে সারা দেশেও কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে।
এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বৈরথে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদেরই এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, চলমান এক দফার আন্দোলন এখনো সরকারের ভিত নাড়াতে পারেনি। এই বাস্তবতায় সরকারের পরিকল্পনামতো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন তাঁরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, বিএনপির আন্দোলন গোছানো মনে হচ্ছে না। এরই মধ্যে তাদের ৪৩ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজা হচ্ছে, গ্রেপ্তারও চলছে। ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলন করতে গেলে গ্রেপ্তার, মামলা আরও বাড়বে, দল চাপে পড়বে। তখন বিএনপি কী করবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংলাপের কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না এই বিশ্লেষক।