সোয়া দুই ঘণ্টায় ৩২০০ মামলা নিষ্পত্তি
মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টায় ৩ হাজার ১৯০টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন হাই কোর্টের নয়টি বিশেষ বেঞ্চ। গতকাল বেলা ২টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন-সংক্রান্ত (ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৮) এসব মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বেঞ্চগুলো। এর আগে নয়টি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এদিকে পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও। তারা বলছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দায়িত্ব নিয়েই পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে মামলাজট সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিশেষ ৯ বেঞ্চে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কয়েশের বেঞ্চে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৪৯টি, বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চে ৪৯৪টি, বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চে ৪৬৯টি, বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চে ৪৯১টি, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে ২৯৭টি, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চে ৪৮৯টি, বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চে ৯৯টি, বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চে ৩০০টি এবং বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের বেঞ্চে ৩০২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির এ উদ্যোগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজ (গতকাল) বেলা ২টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা মোতাবেক ২০২১ সাল পর্যন্ত এসব ফৌজদারি বিবিধ মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করেন ৯টি বিশেষ বেঞ্চ। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। মাঝে মাঝেই বিশেষ বেঞ্চ করে দিয়ে বিচারাধীন পুরনো মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করছেন। শিগগিরই আরও বিশেষ বেঞ্চ আসবে বলেও জানান সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এ কর্মকর্তা। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত বছর ২০ ও ২১ এপ্রিল দুই দিনে ১৩টি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ওই দুই দিনে ৮ হাজার ৫১৭টি জামিন-সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপর ১১ আগস্ট একটি বিশেষ বেঞ্চে জামিন-সংক্রান্ত পুরনো আরও ১ হাজার ১৮৫ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ‘জামিন মঞ্জুর ও জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা’ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় এসব মামলা হয়েছিল।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মামলাজট নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আজকে (বৃহস্পতিবার) ৯টি বিশেষ বেঞ্চও তার সেই ধরনের একটি উদ্যোগ। এসব বেঞ্চে যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে, এ মামলাগুলো শুধু সংখ্যা দখল করে বসে ছিল। প্রকৃতপক্ষে এ মামলাগুলোর অধিকাংশই অকার্যকর হয়ে গেছে। এমনভাবে উদ্যোগ নিয়ে পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করলে মামলাজট দ্রুতই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন প্রধান বিচারপতির একটি ভালো উদ্যোগ। তিনি বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার পর সঙ্গে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না এ মর্মে রুলও জারি করেন হাই কোর্ট। এসব মামলায় অনেক ক্ষেত্রেই আসামি বা আইনজীবী কেউ ওই রুল শুনানির উদ্যোগ নেন না। অনেক সময় অন্য বেঞ্চ বা বিচারিক আদালত থেকে জামিন নেওয়ার কারণেও রুলগুলো বিচারাধীন থেকে যায়। আর যখন পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়, তখন একটি রুল বিচারাধীন থাকলেও সেটি মামলা হিসেবে বিবেচ্য হয়। ফলে বিচারাধীন মামলা বাড়তে থাকে। এ কারণে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে এসব মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা প্রধান বিচারপতির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত বছর ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরদিন আপিল বিভাগে তাকে দেওয়া আইনজীবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি মামলাজট কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি ২৭ জানুয়ারি আট বিভাগের জন্য হাই কোর্ট বিভাগের আটজন বিচারপতির নেতৃত্বে পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করেন।