নতুন উদ্ভাবন: বাতাসের আর্দ্রতাই হবে অফুরান বিদ্যুতের উৎস
ডেস্ক নিউজ আদালত বার্তা , প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩
বাতাস থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জাদুর কাঠি হলো ন্যানোপোর। ছবি: ইউরেকাঅ্যালার্টের সৌজন্যে
বাতাস থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জাদুর কাঠি হলো ন্যানোপোর। ছবি: ইউরেকাঅ্যালার্টের সৌজন্যে
সবুজ জ্বালানির সন্ধানে বিজ্ঞানীরা সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জৈব জ্বালানিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক শক্তির উৎস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। এবার, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের গবেষকেরা এমন একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা বাতাসের আর্দ্রতা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের একটি দল সম্প্রতি দেখিয়েছে, প্রায় যেকোনো উপাদানকে এমন একটি যন্ত্রে পরিণত করা যেতে পারে, যা বাতাসের আর্দ্রতা থেকে ক্রমাগত বিদ্যুৎ তৈরি করবে। মূলত উপাদানগুলোর মধ্যে ১০০ ন্যানোমিটারের চেয়ে ছোট ছিদ্র থাকলেই এটি সম্ভব হবে। এই উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণাপত্রটি অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।
আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ইউমাস আমহার্স্ট কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশলের স্নাতকের ছাত্র ও গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক জিয়াওমেং লিউ বলেছেন, ‘এটি অভূতপূর্ব একটি ব্যাপার। এই আবিষ্কারটি আমাদের চারপাশের বাতাস থেকে বিশুদ্ধ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।’
ইউমাস আমহার্স্টের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের জ্যেষ্ঠ লেখক জুন ইয়াও বলেন, বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ রয়েছে।
জুন ইয়াও আরও বলেন, ‘একটি মেঘের কথা চিন্তা করুন, যেটি পানির ফোঁটার ভর ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ফোঁটার প্রতিটিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ থাকে এবং যখন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তখন মেঘে মেঘে ঘর্ষণে বজ্র তৈরি হতে পারে। তবে বজ্রপাত থেকে আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিদ্যুৎ তৈরি করতে হবে, তা জানি না। আমরা সফলভাবে ঘনীভূত মেঘের মতো একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি, যা নির্ভরযোগ্যভাবে এবং ক্রমাগত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।’
ইয়াও এবং তাঁর সহকর্মীরা একটি বিশেষ সংখ্যা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা একটি ‘ইলেকট্রিসিটি হার্ভেস্টার’ নামের একটি ডিভাইস ডিজাইন করেছেন, যা ন্যানোপোরস বা ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত একটি পাতলা পর্দা। এই ন্যানোপোরগুলোর ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটারের চেয়ে কম এবং এই ছিদ্রগুলোর মাধ্যমে পানির অণু ওপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত করা হয়।প্রতিটি ছিদ্রের ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটারের (এনএম) কম বা মানুষের চুলের পুরুত্বের ১ হাজার ভাগের এক ভাগেরও কম হওয়ার শর্তটি গুরুত্বপূর্ণ। ‘গড় মুক্ত পথ’ নামে পরিচিত একটি প্যারামিটার এখানে প্রযোজ্য। অর্থাৎ একটি পদার্থের একক অণু, এ ক্ষেত্রে বাতাসে জলকণা, একই পদার্থের অন্য একক অণুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার আগে যতটা পথ ভ্রমণ করে—এটিই গড় মুক্ত পথ। পানির অণুগুলো যখন বাতাসে থাকে তখন সেগুলোর গড় মুক্ত পথ প্রায় ১০০ এনএম হয়।
বাতাস থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল হিসেবে এই ১০০ ন্যানোমিটার পুরুত্বের একটি পর্দার ভেতর দিয়ে জলকণাযুক্ত বাতাস প্রবাহিত করা হয়। যেহেতু ছিদ্রগুলোর ব্যাস খুবই ছোট, তাই প্রবাহিত হওয়ার সময় ছিদ্রগুলোর প্রাচীরের সঙ্গে পানির অণুগুলোর সংঘর্ষ হয়। ফলস্বরূপ ছিদ্রযুক্ত পর্দার ওপরের অংশে নিচের অংশের তুলনায় বৈদ্যুতিক চার্জ বহনকারী অনেক বেশি পানির অণু থাকে।এতে পর্দাটির দুই পাশে চার্জের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। মোটকথা, এই প্রক্রিয়ার ফলে এমন একধরনের ব্যাটারি তৈরি হয় যা বাতাসে যতক্ষণ আর্দ্রতা থাকে ততক্ষণ কাজ করে।মানব-সৃষ্ট মেঘের মূল ধারণাটিকে ‘জেনেরিক এয়ার-জেন প্রভাব’ বলা হয়, যা ইয়াও এবং ডেরেক লাভলির পূর্ববর্তী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। গবেষণাটিতে তাঁরা দেখিয়েছিলেন, জিওব্যাক্টর সালফারেডুকেন্স নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রোটিন ন্যানোয়ার দিয়ে তৈরি একটি বিশেষ উপাদান ব্যবহার করে বাতাস থেকে ক্রমাগত বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা যেতে পারে।নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন ও পরিমার্জন এই ধারণাটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। ফলে একটি নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হয় যা বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।