1. multicare.net@gmail.com : আদালত বার্তা :
শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

দেড় ডজন সংস্কার করেছে আইন মন্ত্রণালয়

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

দেড় ডজন সংস্কার করেছে আইন মন্ত্রণালয়

১৫ হাজারের বেশি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার

নিউজ ডেস্ক আদালত বার্তা : ০১ আগস্ট ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায় এক বছর পার হতে যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত এক বছরে প্রায় দেড় ডজন সংস্কার কার্যক্রম করেছে। আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ডিজীটালাইজেশন কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার হয়রানিমূলক মামলাও প্রত্যাহার করা হয়েছে এ সময়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের করা সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরেন।

আইনি সংস্কার: লিখিত বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এ আইনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষী নিরাপত্তা এবং ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বতন্ত্র জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে মেধা, সুযোগের সমতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারকাজে গতি আনতে দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংশোধন করা হয়েছে। মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণের পরিবর্তে এফিডেভিটের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ, অনলাইনে সমন জারি এবং মূল মামলার অধীনেই রায় কার্যকর করার সুযোগ রাখা হয়েছে এ সংশোধনের মাধ্যমে।

ফৌজদারি আইন সংশোধনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্তের অধিকারের নিশ্চয়তা, জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দ পরিহার, তদন্ত প্রক্রিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনা, মিথ্যা মামলায় হয়রানি রোধ করাসহ বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে।

জাতীয় আইনগত সহায়তা আইন সংশোধনের মাধ্যমে মামলা-পূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান সংযোজন করা গয়েছে। কমপক্ষে ৯ ধরনের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দায়েরের আগে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি জেলায় একজনের স্থলে তিনজন বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসে পদায়নের বিধান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আদালতের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বাইরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিরোধের আপস নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধনীর মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তদন্ত সম্পন্নে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার জবাবদিহির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া সাক্ষীদের সুরক্ষা, শিশু ধর্ষণ মামলার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং পুরুষ শিশু নিপীড়নকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন যুগোপযোগী বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধন করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ স্টিকার থাকলে বা জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন মর্মে বিধান করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করে আগের সাইবার নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো এবং এসবের অধীনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বাতিল করা হয়েছে। বিয়ে নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করে জেন্ডার বৈষম্যমূলক বিধান বাতিল করা হয়েছে। তা ছাড়া অনলাইনে বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজীটালাইজেশন

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষমতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ এবং জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সরকারের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা, শুনানির তারিখ এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি কমেছে। একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাব-রেজীস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রম দ্রুততর করার লক্ষ্যে ডাক্তার, ম্যাজীস্ট্রেট ও অন্য সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পত্রের আলোকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্র্যাকটিস ডাইরেকশন জারি করেছেন। বিদ্যমান আদালত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজীটালাইজড করার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি পারিবারিক আদালতকে ই-ফ্যামেলি কোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগের ৫০ শতাংশ নথি ডি-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন (অ্যাটাস্টেশন) সেবাকে শতভাগ অনলাইন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের জামিনপ্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে বেইলবন্ড জমা দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যারটি ব্যবহার শুরু হবে।

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রম

রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয় সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক হরেনমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট