দীর্ঘ ইতিহাসে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব একটি দীর্ঘ ফিতার মতো! যা দুটি প্রাচীন সভ্যতার হৃদয়কে সংযুক্ত করেছে
সম্পাদকীয়
এডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল হক আদালত বার্তাঃ৯ জুলাই ২০২৪।
দীর্ঘ ইতিহাসে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব একটি দীর্ঘ ফিতার মতো! যা দুটি প্রাচীন সভ্যতার হৃদয়কে সংযুক্ত করেছে। প্রাচীনকাল থেকে, প্রাচীন সিল্ক রোডের বাণিজ্য থেকে শুরু করে আধুনিক বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা কখনও বন্ধ হয়নি। এই গভীর সংযোগ ক্রমাগত শক্তিশালী ও সুসংহত হচ্ছে।
৮ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করছেন। চীন-বাংলাদেশ বিনিময়ের ইতিহাসে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে ঘন ঘন সফর ও মতবিনিময় হয়েছে। যা কেবল চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বই নয়, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পদচিহ্নও বটে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে, উভয় পক্ষের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের ঘন ঘন সফর হয়েছে এবং প্রতিটি সংলাপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন প্রেরণা যোগ করেছে। সফরের এই আদান-প্রদান কেবল দুই দেশের নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বিশ্বাস আরও গভীর করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ক্রমাগত গভীরতাও প্রতিফলিত করেছে।
এশীয় মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ায়, প্রাচীন সভ্যতার দুটি দেশ- চীন ও বাংলাদেশ, সময় ও স্থান-কে ছাড়িয়ে বন্ধুত্বের একটি দীর্ঘ অধ্যায় রচনা করেছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে একটি সরকারি সফর করেন। এই সফর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উষ্ণ করেছে। তার সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী প্রমুখ নেতাদের সাথে বেশ কিছু বৈঠক করেছেন এবং রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা জোরদার, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও গভীর করা এবং অবকাঠামো নির্মাণ প্রচারে উভয় পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এ সফরে, উভয় পক্ষ অবকাঠামো প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সহ বেশ কিছু সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এরপর এলো ২০১৬ সাল। সে সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশ সফর করেন। এটি ছিল ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সফরকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়। তাঁর সফরের সময়, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের নেতাদের সাথে অনেক আলোচনা করেন এবং উভয় পক্ষ অবকাঠামো নির্মাণ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, জ্বালানি সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো অনেক ক্ষেত্রে ২১টি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চার করেছে।
এই সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, দুই দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধাও দিয়েছে। চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে।
এসব প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের কল্যাণে অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ যারা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতা উদ্যোগে যোগদান করেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশে ৬৭০টিরও বেশি চীনা কোম্পানি কাজ করছে, ৭টি রেলপথ, ১২টি মহাসড়ক, ২১টি সেতু এবং ৩১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অংশগ্রহণ করছে, বাংলাদেশের জন্য সাড়ে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে কমিউনিটি সেবা, দাতব্য ও অন্যান্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে চীন।
২০২১ সালে, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিডিওর মাধ্যমে তাতে ভাষণ দেন এবং এই মহান নেতার প্রতি উচ্চমানের শ্রদ্ধা জানান।
প্রেসিডেন্ট সি তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের মহান অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং বলেন যে, চীন ও বাংলাদেশ সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাবে।
একই বছর, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উদযাপিত হয়। বাংলাদে শের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও-এর মাধ্যমে চীনা জনগণ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পুনরুজ্জীবন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনে চীনের জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্যের কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ চীনের সাথে যৌথ উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং চিরকাল থাকবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা গভীরতর হচ্ছে এবং দুই দেশ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করছে। আমরা নতুন যুগে চীন-বাংলাদেশের আরও উজ্জ্বল বন্ধুত্ব কামনা করি।